বাংলাদেশের লালনসংগীতের অন্যতম কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি শুধু একজন সংগীতশিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথিকৃত। তার গানে ছিল মাটির গন্ধ, নদীর সুর, মানুষের প্রাণ।
লালন সাঁইয়ের গানকে জীবনের মতো বুকে ধারণ করে তিনি গেয়ে গেছেন বছরের পর বছর, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার লোকসংগীতের গভীর সৌন্দর্য। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিনগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস নিতে হতো তাকে। শেষবারের মতো ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ডায়ালাইসিসের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এরপর আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে।
অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে চলে গেলেন কিংবদন্তি এ সুরসাধিকা। তার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এ প্রথিতযশা শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সহকর্মীরা।
আমাদের লালনগীতির কিংবদন্তি, শিল্পী সাধক ছিলেন ফরিদা পারভীন আপা। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। অনেক কষ্ট করেছেন। সংগীতে তার অনেক অবদান রয়েছে। তাকে সংগীতপ্রেমীরা কখনো ভুলতে পারবে না। অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে আর পেরে উঠলেন না। চলেই গেলেন! কষ্ট হচ্ছে অনেক। তার মতো গুণী শিল্পীর চলে যাওয় আসলেই কষ্টের। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা রইল।
– কনকচাঁপা, সংগীতশিল্পী
ফরিদা আপার কণ্ঠে সবচেয়ে জনপ্রিয় লালন সাঁইয়ের গান ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’। আজ সেই খাঁচা থেকে চিরতরে চলে গেলেন লালনকন্যাখ্যাত লোকসংগীতের বরেণ্যশিল্পী আমাদের ফরিদা পারভীন আপা। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আর এ স্নেহভরা হাসি মুখটি দেখা হবে না। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। এসব মানুষের স্নেহ ও দোয়াই আমাদের চলার পথের পাথেয় ছিল। একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। কষ্ট হয়, কিন্তু কিছুই করার নেই। এটাই সৃষ্টির নিয়ম। সাইকে চলে যেতে হবে একদিন। দোয়া করি আল্লাহ যেন আপাকে জান্নাতবাসী করেন।
– মনির খান, সংগীতশিল্পী
আমাদের গর্ব, দেশের গর্ব ফরিদা পারভীন আন্টি। তার বিদায়ে সংগীতাঙ্গনে আরও একটি শূন্যস্থান তৈরি হলো। লালনের গান মানেই ছিল ফরিদা পারভীন। এ স্থানটি তার নামেই থাকবে। এ জায়গা কখনো কেউ নিতে পারবেন না। সবাইকে চলে যেতে হবে একদিন। আমরা কেউই এ পৃথিবীতে স্থায়ী নই। কিন্তু কজনইবা নিজের কর্ম দিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে পারেন, সেটাই মুখ্য। ফরিদা আন্টি মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।
– সামিনা চৌধুরী, সংগীতশিল্পী
লালনকন্যাখ্যাত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন চলে গেলেন। একদিন আমরা সবাই চলে যাব। চলে যাব সবাই একে একে/ কেউ আগে কেউ পরে-খুবই প্রিয় একটি গান। এটি উনারই গান। এ গানেই তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তার সঙ্গে যতবারই কাজ হয়েছে, দেখা হয়েছে, তাকে ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ একজন একাকী মানুষ মনে হয়েছে। অন্তর্মুখী এ জাতশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাই। তার মোহিত কণ্ঠের সুরে সুরে তিনি রেখে গেছেন অগনিত ভক্ত-শ্রোতাদের। গানের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরকাল দর্শক শ্রোতার অন্তরে। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
– ফাহমিদা নবী, সংগীতশিল্পী
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়! আমরা বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে ফরিদা পারভীন আপাকে স্মরণ করছি। শিল্পীদের মৃত্যু নেই। তারা কর্মের মধ্যেই ভক্তদের হৃদয়ে আজীবন রয়ে যান। ফরিদা আপা আমাদের লোকসংগীতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা অতুলনীয়। তার মৃত্যুতে শোকাহত, তবে তিনি আমাদের মাঝেই থাকবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন। আপার পরিবারের প্রতি রইল সমবেদনা।
– আসিফ আকবর, সংগীতশিল্পী
একজন কিংবদন্তির বিদায়। তার চলে যাওয়াতে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে তা অপূরণীয়। আমরা ধীরে ধীরে অভিভাবকশূন্য হয়ে যাচ্ছি। একে একে সব গুণী শিল্পী আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছন। এ মুহূর্তে তাকে নিয়ে কী বলা উচিত সেটি বুঝে উঠতে পারছি না। তিনি ছিলেন আমাদের সংগীতের এক নক্ষত্র। লালনকন্যা তাকে বলা হতো। লালনের গান বিশ্ব দরবারে তিনিই পৌঁছে দিয়েছেন। তার মৃত্যুতে শোকাহত আমরা। সৃষ্টিকর্তা তাকে শ্রেষ্ঠতম স্থানে রাখবেন, এটাই কামনা করি। তার পরিবারের প্রতিও রইল সমবেদনা।
– বাপ্পা মজুমদার, সংগীতশিল্পী
ছোটবেলা থেকেই যার গান শুনে বড় হয়েছি, যিনি ছিলেন আমাদের পারিবারিক বন্ধু, তিনি এ উপমহাদেশের কিংবদন্তি মরমি শিল্পী ফরিদা পারভীন। সৌভাগ্য যে, এভাবে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তখন আমি খুবই ছোট। অত কিছু মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে কী গভীর নিমগ্নতায়, উপলব্ধিতে তিনি লালন সাঁইজির গানগুলো গাইতেন, কীভাবে টেনে টেনে কথা বলতেন, খুনসুঁটি করতেন, হাসতেন। অবাক হয়ে তাকে দেখতাম, শুনতাম। পরে দিন যেতে যেতে দেখেছি, জেনেছি আমার মতো অসংখ্যা মানুষের হৃদয় তিনি ছুঁয়েছিলেন তার কণ্ঠ দিয়ে, লালন ধ্যানে; অপার সাধনায়। সময় পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন আমাদের এক অমূল্য সম্পদ।
– শারমিন সুলতানা সুমি, সংগীতশিল্পী