জেড নিউজ, ঢাকা:
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে সোমবার তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুই দেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ের বৈঠক আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা এ সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি এক্সচেঞ্জ নোট সই হবে।
সোমবার দুপুরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। তাঁর সঙ্গে এ সফরে যোগ দেবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হবে তা হলো– প্রতিরক্ষাবিষয়ক সহযোগিতা; এলএনজি ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণসহ জ্বালানি সহযোগিতা; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ মালয়েশিয়া (আইএসআইএস); বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও চিপ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মিমোস (এমআইএমওএস) এর ভেতর সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক চেম্বার এফবিসিসিআইর সঙ্গে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়িক চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা।
সম্ভাব্য এক্সচেঞ্জ নোটগুলো হলো– হালাল ইকোসিস্টেম, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং উচ্চ শিক্ষা খাতে সহযোগিতাবিষয়ক নথি সই।
গত সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। ড. ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরে শ্রমবিষয়ক চুক্তি সই নিয়ে তিনি বলেন, চুক্তি সই হবে কিনা– এটা এখন বলা কঠিন। তবে অনেক অস্বস্তি বাংলাদেশ দূর করতে পারবে বলে আশাবাদী।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর কোনো দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সফর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। গত অক্টোবরে প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান বাংলাদেশ সফর করেন।
আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে সোমবার রাতে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে ড. ইউনূসের। এদিন রাতে হোটেলেই অবস্থান করবেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে সফরের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ দিন সকালে পুত্রজায়ায় আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিম। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সমঝোতা স্মারক ও এক্সচেঞ্জ নোটগুলো সই হবে। এরপর দুই সরকারপ্রধান গণমাধ্যমে কথা বলবেন। এ দিন দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছে মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান।
এরপর হোটেলে ফিরে একটি ব্যবসায়িক সেমিনারে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সেমিনার শেষে হোটেলে মালয়েশিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ীর কয়েকজন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলাদা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। রাতে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী, নাগরিক সমাজ, শীর্ষ ব্যবসায়ী, আমলাদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
দেশটির ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে। এর জন্য বিশেষ সমাবর্তনের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বুধবার সকালে সে সমাবর্তনে যোগ দেবেন ড. ইউনূস। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি বক্তৃতায় অংশ নেবেন। দুপুরে হোটেলে ফিরে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এ ছাড়া দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেবেন। বুধবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়া ছাড়ার কথা রয়েছে তাঁর।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক বছর ধরেই রয়েছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কে বড় পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সমস্যাগুলো দূর করা এবং আরও শ্রমিক নেওয়ার মতো বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার চেষ্টা করছে। আর এ সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ফলে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল আশা করছে ঢাকা।