২১ জুলাই, রোববার। আন্দোলনের তেজে তখন উত্তপ্ত গণভবন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন শেখ হাসিনা। সে সব বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পক্ষে অধিকাংশ মত দিলেও দলের সিনিয়র গুটিকয় নেতা আন্দোলন দমনের পক্ষে তখনো কানপড়া দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিন কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া আগেই সেদিন সকাল থেকেই তুঙ্গে চলে যায় আন্দোলন। সংঘর্ষ-সঙ্ঘাত বাড়তেই থাকে। দেশজুড়ে কারফিউয়ের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে সারাদেশে ১৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন এবং নরসিংদীতে ৪, গাজীপুরে ২, নারায়ণগঞ্জে ১, সাভারে ১ ও চট্টগ্রামে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আহত হন কয়েক হাজার।
২২ জুলাই, সোমবারও কারফিউ বলবৎ থাকার ঘোষণা দেন হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনকারীদের দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতেও এদিন রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল ও মিরপুর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এদিন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয় হাসিনা প্রশাসন। এদিন সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণমাধ্যমকে নিহতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পিএসসি’র সকল ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এদিন রাতে গণভবনে দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
জেড নিউজ, ঢাকা