২০১৩–১৫ সময়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করে জোহানেস জুট বলেন, বাংলাদেশের প্রতি তার ‘গভীর ভালোবাসা’ রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের নবনিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক ‘সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা’ করেছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতি ‘দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন’ জোহানেস জুট।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জঁ পেসমে এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
২০১৩–১৫ সময়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করে জোহানেস জুট বলেন, বাংলাদেশের প্রতি তার ‘গভীর ভালোবাসা’ রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেন, “আপনি এবং আপনার দুর্দান্ত দল একটি অসাধারণ কাজ করছেন।”
বিশেষ করে তিনি আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের ‘সাহসী পদক্ষেপের’ প্রশংসা করেন বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
জুট বলেন, “আমরা আমাদের যাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে পাশে থাকতে চাই।”
গত বছরের ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ শহীদ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, “এটা ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত।”
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বিশ্ব ব্যাংকের সমর্থনের জন্য জুটকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা দায়িত্ব গ্রহণের সময় চারদিকে ছিল এক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র—একটি ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতির মত। আমাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।”
জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তরুণরাই জাতিকে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে।”
ইউনূস বলেন, “গত জুলাই মাসে আমাদের তরুণরা যে অবদান রেখেছে, তা ঐতিহাসিক। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা এবং নারীরা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। আজ আমরা ‘জুলাই নারী দিবস’ পালন করছি, যাতে তাদের আত্মত্যাগ কখনও বৃথা না যায়। তরুণরাই আমাদের দেশের প্রধান শক্তি, তাই আমাদের পরিকল্পনা তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত।”
তিনি বিশ্ব ব্যাংককে অনুরোধ করেন, যেন তারা বাংলাদেশকে শুধুমাত্র একটি ভৌগোলিক সীমানা হিসেবে না দেখে।
“বাংলাদেশ যদি সমৃদ্ধ হয়, তাহলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া উপকৃত হবে। আলাদা থাকলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। আমাদের একটি সমুদ্রবন্দর আছে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশে তরুণ জনসংখ্যার ঘাটতি রয়েছে। আমরা তাদের বলেছি—তাদের কারখানাগুলো এখানে স্থানান্তর করুন। শিল্পায়নের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছু দেব। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারীর ক্ষমতায়নে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চালু হওয়া কন্যাশিশুদের শিক্ষা ভাতা কর্মসূচি এখন বহু দেশের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতেও আমরা আপনাদের পাশে থাকব এবং তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করব।”
জুট বলেন, গত অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে এবং আগামী তিন বছরও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “নতুন পরিচালনা ব্যবস্থার ফলে এনসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। আমরা এটাকে আরও কার্যকর করতে চাই। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে নিট বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মূল চালিকাশক্তি ছিল ইন্ট্রা-কম্পানি ঋণ এবং শক্তিশালী ইকুইটি বিনিয়োগ।”