“ইউএসটিআরের সঙ্গে যখন আনুষ্ঠানিক আলাপ হবে, তখন আমরা বুঝতে পারব। মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্তই আসুক, সেটার প্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ‘তুলনামূলক কম’ দাবি করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এরপরও ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শূল্ক আরোপের ‘ন্যায্যতা’ থাকে না।
মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিষয়টির সুরাহা করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলার কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। ওদের সঙ্গে আরেকটা মিটিং আছে। ইউএসটিআরের সঙ্গে যখন আনুষ্ঠানিক আলাপ করবে, তখন আমরা বুঝতে পারব। মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্তই আসুক, সেটার প্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
“এখন বৈঠকটা কিন্তু মোটামুটি পজিটিভ হবে। চিঠি একটা প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এখন ওয়ান টু ওয়ান নেগোশিয়েশন হবে।”
বাংলাদেশের সব পণ্যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেই চিঠির ছবিও তিনি ট্রুথ সোশালে প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর তখন বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে।
এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয় সেখানে।
এই তিন মাস সময় ট্রাম্প মূলত দিয়েছিলেন আলোচনার জন্য। বাংলাদেশের তরফ থেকেও সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ৩৭ শতাংশের বদলে ট্রাম্প এবার ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়্গ নামিয়েছেন বাংলাদেশের ওপর।
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।
তাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাত, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার।
বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ভারতও চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
এ প্রসঙ্গ ধরে অর্থ উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা ঠিক যে আমাদের এখানে ঘাটতি মাত্র ৫ বিলিয়ন ডলার, আর ভিয়েতনামে ১২৫ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ভিয়েতনামকে মোটামুটি কনশেসন দিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এত কম ডেফিসিট বা ঘটতি, তবুও আমাদের ওপর এত শুল্ক দেওয়ার কোনো জাস্টিফিকেশন থাকে না। আমরা আরও নেগোশিয়েট করব।”
‘ভালো নিউজ গুরুত্ব পায় না’
জুন মাসে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে খাদ্য বহির্ভূত খাতে এখনও মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “মূল্যস্ফীতি আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমে গেছে। আমরা আশা করছি এটা ক্রমাগত কমবে। নন ফুডের ক্ষেত্রে কম কমেছে। নন ফুডে অনেক রকম ফ্যাক্টর আছে, জ্বালানির দাম ও অন্যান্য।”
মূল্যস্ফীতি নিয়ে ‘স্বস্তি’ এলেও অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম তা ভালোভাবে প্রচার করেনি বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলে, “এই ভালো নিউজটা ভালোভাবে পোর্ট্রে করা হয়নি। ডেইলি স্টার প্রথম আলো একটু কাভার করে। অন্যরা কেউ কাভার করে না। এই দুইটা পত্রিকা ভালো লিখেছে যে ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।”
বৈঠকে এলএনজি, স্কুল শেল্টার, সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।