সংশোধিত এডিপি থেকে এসময়ের মোট ব্যয় পিছিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা।
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এখনও না কাটায় চলতি অর্থবছরের ১১ মাস শেষ হলেও সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মোট বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ০৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে।
বাস্তবায়নের এ হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ কম। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এসময়ে অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মঙ্গলবার প্রকাশিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ তথ্য বলছে, জুলাই থেকে মে সময়ে বাস্তবায়নের এ হার গত দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া হয়েছিল ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে এডিপি কাটছাঁট করায় ১১ মাস শেষে এ হার কিছুটা বেড়েছে।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।
সংশোধিত এডিপি থেকে ১১ মাসে মোট ব্যয় পিছিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দসহ এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় সংশোধন করে।
বিদায়ী অর্থবছরের প্রথমভাগে রাজনৈতিক অস্থিরতায় উন্নয়ন কাজ ধীর হয়ে পড়লেও ডিসেম্বরে গতি কিছুটা বাড়ে। তবে পরের মাসগুলোতে আবার তা ধীর হয়ে গেছে।
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের তাড়া দেখা যায়। এছাড়া কাজ শেষ না করেও অর্থছাড়ের প্রবণতা বাড়ার অতীত ইতিহাস রয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ প্রবণতা তেমন দেখা না গেলেও মাসের ব্যবধানে বাস্তবায়ন বেশ বেড়েছে।
আইএমইডির সবশেষ তথ্য বলছে, একক মাস হিসেবে মে মাসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয় ১৭ হাজার ৫৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে মাসে এ হার ছিল ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ; খরচ হয়েছিল ২১ হাজার ০৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এক মাস আগেও তথা এপ্রিলে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৫৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিলে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ; খরচ হয়েছিল ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনকে কেন্দ্র করে জুলাই-অগাস্ট জুড়ে জ্বালাও পোড়াওয়ের পর এডিপি বাস্তবায়নে ধস নামে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থবির হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার তা আরও কমে গেছে।
একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির প্রভাবও পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। সরকার কম ব্যয়ের দিকে ধাবিত হয়ে এটি কাটছাঁটও করেছে। সংশোধিত এডিপিতে টাকার অঙ্কে কমানো হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এদিকে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মধ্যে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।