জাতিসংঘ সফরের সময় চীনা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি দাবি করেছেন, পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল, কিন্তু ভারত সেই ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করতে এক মাস সময় নিয়েছিল।
মঙ্গলবার (৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সামা টিভি।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য এবং কাশ্মীর ইস্যু জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
বিলাওয়াল বলেন, পাকিস্তান সবসময় সংলাপের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ভারত বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি শান্তির পক্ষে অনুকূল নয়।
তিনি আরও বলেন, ভারতের একগুঁয়ে মনোভাব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পথে বড় অন্তরায়। পাকিস্তান বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে যাতে নয়াদিল্লির আগ্রাসী অবস্থান বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যায়। কাশ্মীর সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘে ভারতের আগ্রাসনের প্রমাণ উপস্থাপন
নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিলাওয়াল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ক্যারোলিন রড্রিগেজ বারকেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরেন এবং মোদি সরকারের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলো—বিশেষ করে ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করে পানিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের—বিষয়ে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, পেহেলগাম হামলার পর কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালায় এবং মিথ্যা অভিযোগ তোলে। তারা নিজেদের জনগণের কাছেও সত্য গোপন করেছে। বাস্তবতা হলো, ভারত সেই সংঘর্ষে পরাজিত হয়েছিল এবং তা স্বীকার করতে এক মাস সময় নিয়েছে।
পাকিস্তান ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোকে ভারতের আগ্রাসনের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অবহিত করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধিকে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রও হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশকেও পাকিস্তানের অবস্থান জানানো হয়েছে।
ভারতের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা ও হস্তক্ষেপের আহ্বান
ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশে বক্তব্যে বিলাওয়াল বলেন, ভারতের যুদ্ধোন্মাদ এবং আগ্রাসী মনোভাব রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, “ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, যা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের সমতুল্য।”
তিনি আরও বলেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই যাতে ভারতকে বোঝানো যায়—যদি তারা নিজেকে একটি মহাশক্তি হিসেবে ভাবতে চায়, তবে তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। শিশুসুলভ মিথ্যাচার বরদাশত করা যাবে না। আমি নিজে সন্ত্রাসবাদের শিকার—আমার মা সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন। যদি পাকিস্তানে কোনো সন্ত্রাসী থেকে থাকে, আমি নিজেই তাকে বিচারের আওতায় আনব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অপরাধীরা এখানে নেই।
তিনি জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও ভারতের একগুঁয়ে মনোভাবের প্রেক্ষিতে কৌশলগত সংযম বজায় রাখার কথা জানান।
চীন, রাশিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, পানামা, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, গায়ানা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং স্লোভেনিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করেন এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান বৈশ্বিকভাবে সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। ভারত আমাদের দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দিয়ে চলেছে। তারা চায় না কাশ্মীর সংকট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী সমাধান হোক।