কিছুটা গতানুগতিক আছে, কিন্তু, একেবারে যে নতুনত্ব নেই তা না। কিছু সাহসী পদক্ষেপও আছে করের ব্যাপারে। আবার কিছু-কিছু আর্থিক শৃঙ্খলাও আনতে চেষ্টা করেছি।”
সংস্কারের ঢেউয়ের সুযোগ নিয়ে অর্থনীতির ‘বিশৃঙ্খলা’ কাটাতে দৃষ্টান্ত রাখার সুযোগ থাকলেও কেন অতীতের কাঠামোতেই বাজেট করলেন সেই প্রশ্ন এল অবধারিতভাবে; জবাব দিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, তুলে ধরলেন দুর্বলতার কারণ।
সংস্কার বা বাজেটে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অতীত কীভাবে পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেগুলোও বর্ণনা করলেন তিনি।
রীতি মেনে বাজেটের পরদিন মঙ্গলবার ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি সমর্থন পেলেন পাশে থাকা পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কিছু সমালোচনার বিষয়ে একমত হলেন না তারা; কিছু বিষয় মানলেন। তবে একেবারে গতানুগতি বাজেট হয়েছে তাতে সায় মিলল তাদের।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিলেন কিছু একটা করার; আর কিছু বিষয় সংশোধনের প্রতিশ্রুতিও এল তার তরফে।
তিনি বলেন, “সংস্কার চলবে, সংস্কার চলমান। আমরা যতটুকু পারি করব, পরে আমাদের পদচিহ্ন রেখে যাব। ফুটপ্রিন্ট। পরে যারাই আসবে তারা আশা করি, তারা এটাকে এগিয়ে নেবে, বাস্তবায়ন করবে।“
প্রথমবারের মত আকার কমিয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোট টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে গিয়ে অতীত অনুসরণের প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন সোজাসাপ্টা উত্তর দিলেন। বললেন, হঠাৎ করে অনেক ‘বিপ্লবী’ বাজেট দেওয়া সম্ভব ছিল না।
“অনেকে বলে তোমরা তো আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছ। আগের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো, আমরা ডিপার্চার করে নিয়ে গিয়ে দারুণ বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ রাজস্ব আনব, এটা সম্ভব না।
“কিছুটা গতানুগতিক আছে, কিন্তু, একেবারে যে নতুনত্ব নেই তা না। কিছু সাহসী পদক্ষেপও আছে করের ব্যাপারে। আবার কিছু-কিছু আর্থিক শৃঙ্খলাও আনতে চেষ্টা করেছি।”
মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ভালো-মন্দ তুলে ধরার সময় তার ডান পাশে ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। মঞ্চে ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
সংসদ না থাকায় সোমবার টেলিভিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এ বাজেটে জিডিপির বিচারে ঘাটতিও ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ধরা হয়।
বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। বাজেট জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের ‘উচ্চাভিলাসী’ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, সংযোজন ও বিয়োজন করে ২২ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে।
সংবাদকর্মী ও সরকারি কর্মকতাদের উপস্তিতিতে দুপুর ৩টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন।
এরপর আসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পালা। তারা দুজন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা কথা বলেন বিভিন্ন প্রসঙ্গে। মঞ্চে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান ও অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তাদের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে যখন প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ বলে উঠে দাঁড়ান অর্থ উপদেষ্টা তখন সাংবাদিকরা আরও প্রশ্ন আছে বলে উঠে দাঁড়ান। তবে পরে আরও কথা হবে বলে আর কারও প্রশ্ন নেননি।
তাদের সরকারে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা যেসময় দায়িত্ব নিয়েছি, ক্ষমতা নিইনি। এবং দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে, একটা চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়েছি, দেশের একটা ক্রান্তিলগ্নে। অনেকেই বলছে, আইসিউতে ছিল দেশটা। একটা খাদের কিনারে চলে আসছিল।
“সার্বিকভাবে আমি মনে করি, ভালো-মন্দ আছে; আমি মনে করি আমরা একটা জনবান্ধব, ব্যবসায়বান্ধব বাজেট দিয়েছি। বাস্তবতা দেখতে হবে আপনাদেরকে। অনেক চাহিদা থাকে, কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাজেটটা যেন বাস্তবমুখী হয়, বাস্তবায়নযোগ্য হয়।“
অতীতের অনুসরণ কেন? ব্যাখ্যা পরিকল্পনা উপদেষ্টার
জাতীয় পর্যায়ে এবং জনমনে সংস্কারের যে প্রত্যাশা ও অঙ্গীকারের কথা বাজেটে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন কৌশলে ‘সাজুস্য’ দেখছে না বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে সেন্টার পর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলছেন, “এই সরকার এসেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর। সব খাতে, বিশেষ করে আর্থিক খাতে বৈষম্য দূর করার কথা বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, বাস্তবায়ন কৌশলে তার সঙ্গে সাজুস্য নেই।”
সরকার পতনের অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) মনে করে ‘নতুন বন্দোবস্তের’ আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরি আসেনি প্রস্তাবিত বাজেটে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোও বাজেট নিয়ে হতাশার কথা প্রকাশ করেছে প্রতিক্রিয়ায়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব সমালোচনার জবাবে কেন অতীতের সব পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে নিজেরা সংস্কারের পথে বড় রকমের ছাপ ফেলতে পারলেন না তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “অনেকে বলেছেন, গতানুগতিক বাজেট, বড় কোনো চমক নাই। কৌশলগত বা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন তারা দেখতে পাচ্ছে না।
“অন্তর্বর্তী সরকার যেটা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, সেখান থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল- যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বরাদ্দ এগুলোর দিকে তাকানো হয়েছে। বৈষম্য কমানো এগুলোর জন্য আসলেই কি কিছু করেছি কি না; এ বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কি না সংখ্যাগুলোর মধ্যে।
“এটা বুঝতে হবে বাজেট চলমান প্রক্রিয়া, এটা শূন্য থেকে শুরু হয় না। যেমন যে কর বিন্যাস এখনও আছে, এ কর ব্যবস্থার মধ্যে তো অনেক অসংগতি আছে, অনেক সামঞ্জস্যহীনতা আছে।”
একটি অসংগতি কমাতে গেলে আরেকটি অসংগতি দেখা দেয় মন্তব্য করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “একদম সুন্দর অবস্থা থেকে শুরু করলে তাত্ত্বিকভাবে আমরা সুন্দর একটা করনীতি করতে পারতাম। এখন তো আমরা একটা জায়গায় আছি, সেখান থেকে এদিক-ওদিক করতে হচ্ছে।”
বাজেট বক্তৃতার মত সংবাদ সম্মেলনেও চলতি অর্থবছরের ৪ শতাংশের নিচে থাকা প্রবৃদ্ধি এক অর্থবছরেই কীভাবে সাড়ে ৫ শতাংশে উঠবে তার দিশা মেলেনি।
কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিকল্পনাও বাজেট বক্তৃতায় সেভাবে খোলাসা করেননি অর্থ উপদেষ্টা। এদিনও উপদেষ্টাদের বক্তব্যে তা আসেনি। তবে অর্থ সচিব বললেন, সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
কালো টাকা ‘ভালো কিছু নয়’, কবুল অর্থ উপদেষ্টার
অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য কমানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও আসছে অর্থবছরেও ফ্লাট, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্টে বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
বাজেটের পরদিন রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিপিডি বলেছে, “এতে বৈধ পথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি আয় হবে বলে মনে হয় না।”
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বারবার প্রশ্নের পরে ‘বৈষম্যবিরোধী’ চেতনার বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা যে ‘ভালো কিছু হয়নি’ তা মেনে নেন অর্থ উপদেষ্টা। বলেন “আমরা বলছি না যে খুব ভালো জিনিস করে ফেলছি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে।”
তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখবেন তুলে ধরলেও কেন এ বিধান রাখা হয়েছে তার ‘প্রাকটিক্যাল’ দিকও ব্যাখ্যা করেন।
তার ভাষ্য, “অনেকের একটা প্রশ্ন যে-কালো টাকা সাদা করতে দেওয়া হল কেন। কালো টাকা কিন্তু ঠিক কালো টাকা না। আমরা যেটা বলেছি যে-অপ্রদর্শিত টাকা, কোনো কারণে যদি আপনার কাছে থাকে, শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেওয়া হয়েছে।
“দুটো দিক আছে। একটা নৈতিক দিক-কালো টাকা সাদা করা, আরেকটা হল প্র্যাক্টিক্যাল দিক- টাকা-পয়সা আমরা ট্যাক্স পাব কিনা। দুই দিকেই কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অবশ্যই কিছু… সেটা আমরা বিবেচনা করব।”
মূল্যস্ফীতিতে আশার কথা শোনালেন গভর্নর
অর্থ উপদেষ্টা প্রস্তাবিত বাজেটে আশা করছেন, নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।
এ নিয়ে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা খুব আশাবাদী না হলেও আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে সরকারকে বলে মনে করে সিপিডি।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা এবং মূল্যস্ফীতি কমানোই আগামী বাজেটের মূল্য লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল মন্তব্য করে বলেন, “বাজেটে সেই পদক্ষেপ ও কৌশল বিস্তারিত থাকা দরকার।”
সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গেল মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা ২৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মূল্যস্ফীতির হার এর চেয়ে কম ছিল সবশেষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপর থেকেই চড়তে থাকে মূল্যস্ফীতির হার, যা আর ৯ শতাংশের নিচে নামেনি।
এদিন অর্থ উপদেষ্টার কাছেও প্রশ্ন থাকল এ নিয়ে; কীভাবে ও কোন ম্যাজিকে এত দ্রুত মূল্যস্ফীতি এতটা কমবে?
এর উত্তর দিতে গিয়ে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারে স্বস্তি আসায় মূল্যস্ফীতি কমবে বলে আশার কথা শোনান ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর। বলেন, “বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দাম বাড়বে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম কমবে। ফলে সেখানে একটা পজিটিভ প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে আমরা আশাবাদী, অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।”
পাচারের টাকা ফেরানো ‘সহজ না’
সরকারের তরফে বারবার পাচারের অর্থ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হলেও তা যে খুব একটা সহজ কাজ না তা স্বীকার করলেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে দুরূহ এ কাজের প্রক্রিয়া সরকার শুরু করেছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যারা পাচার করে, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক। লেয়ারিং করে টাকা পাঠায়। এগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে। ১২টা উল্লেখযোগ্য কেইস নেওয়া হয়েছে, সময় লাগবে তবু কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমরা বলছি যে এক-আধ বছর লাগতে পারে। প্রসেস শুরু হয়েছে। কালো টাকা পেলে বাজেট সাপোর্টটা হয়ত কম লাগত। আইএমএফের কাছে যেতে হত না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা পারিনি।”
বোঝা বাড়াচ্ছে ঋণের দায়
প্রস্তাবিত বাজেটের যে আকার ধরা হয়েছে সেটির বড় অংশ ব্যয় হতে যাচ্ছে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতে।
তবে ঋণের এই ‘দুষ্ট চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এ সময় পুরনো ঋণের চাপে নিজেরা যে প্রকল্প নেবেন সেটিও পারছেন না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। বলেন, “এ বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় চলে যাচ্ছে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের দায় মেটাতে। এবং তার সাথে ভর্তুকি আছে, কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি আছে; সেটা রাখতে হচ্ছে কারণ মূল্যস্ফীতিকেও আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে গত বছর দায়িত্বগ্রহণের আগে থেকেই আমরা পেয়েছি।
“কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখবেন যে জ্বালানিতে বিদেশিদের পাওনা পুরোটা আমরা পরিশোধ করে দিয়ে এখন অন্তত স্থিতি অবস্থায় এসেছি। আমরা আসলে যেটা চাচ্ছি, সেটা হলো- ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের যে দুষ্ট চক্র, এটা থেকে বেরিয়ে আসার; এক বাজেটে হবে না, অন্তত শুরুটা যেন আমরা করে যেতে পারি।”
আগামী অর্থবছরের জন্য ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
রাজস্ব আহরণ ‘বড় চিন্তা’
বাজেটের আকার ও জিডিপির বিবেচনায় ঘাটতির কমিয়ে আনলেও অর্থ উপদেষ্টার প্রবল উচ্চাশা রাজস্ব আহরণকে ঘিরে। প্রস্তাবিত বাজেটের তিন চতুর্থাংশ রাজস্ব হিসেবে আহরণ করে ব্যয় মেটানোর পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন তিনি। লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ৮ শতাংশ ৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) লক্ষ্য দিয়েছেন ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটির।
এমন অঙ্ক সামনে আসার পর থেকেই বিশ্লেষকরা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ লক্ষ্য পূরণকে বড় চিন্তা হিসেবে তুলে ধরেছে সিপিডি।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা বলেন, “রাজস্ব আদায় কখনোই প্রক্ষেপণ অনুযায়ী হয় না। সব সময় রাজস্ব আদায় একই ধারায় রয়েছে। এবারও উচ্চ আকাঙ্ক্ষার রাজস্ব আহরণ বাজেটের বড় চিন্তার বিষয়।
এনবিআরের বিরাজমান অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে এ পরিমাণ রাজস্ব আদায় কীভাবে হবে, তার কোনো কৌশল দেখছে না সিপিডি।
প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত ১৭ শতাংশের উপরে না নেওয়া পর্যন্ত এই বাজেট দিয়ে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করা সম্ভব না।
প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় করতে বড় ধরনের সংস্কারের পরামর্শ দেন তিনি। ভ্যাট ও পরোক্ষ করের উপর সরকারের নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ওঠার কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে রাজস্ব আদায়ে কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরা হলেও এ লক্ষ্যমাত্রা আদৌও অর্জন সম্ভব কি না সেটির সদুত্তর সরকারের কারও তরফে আসেনি।
আহরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো তুলে ধরেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তারা দুজনই প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর কথা বললেন।
মধ্যবিত্ত ও ব্যবসায়ীদের ওপর করের চাপ বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সালেহউদ্দিন বলেন, “খারাপ দিক বলে তো আমি বলব না। আমি বলি যে আরেকটু ভালো হত যদি সম্পদ আমরা বেশি পেতাম, আমাদের দেশীয় সম্পদ যদি বেশি, ট্যাক্স যদি আরও বেশি আদায় করতে পারতাম, ট্যাক্স যদি ফাঁকি না দেওয়া হত, ভ্যাট যদি ফাঁকি না দেওয়া হত।
“দুর্নীতি যদি না থাকত দেশে, টাকাগুলো (পাচার হওয়া) যদি ফেরত আনতে পারতাম, তখন আমার এই বাজেট সাপোর্টও লাগত না আইএমএফ কিংবা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের। ওই টাকা দিয়ে কিন্তু আমরা পুরো বাজেটটাই করতে পারতাম। সেই দিক থেকে আমি মনে করি যে এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।”