ভৌগলিক কাঠামো অনেকটা হিরকখন্ডের মতো হওয়ায় একে হিরক রাজ্যও বলা হয়ে থাকে। ২২ হাজার ৩২৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই রাজ্যটির প্রায় ৩০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মৈতেই উপজাতি সংখ্যা গরিষ্ঠ। সংখ্যায় তারা ৫৭ শতাংশ। যে কারনে দীর্ঘদিন ধরেই সেখানকার সংখ্যালঘু নাগা, কুকি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো তারা।
২০১৭ সালে রাজ্যটিতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর মেহতেইদের অত্যাচার ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিজেপির ইন্ধনে উগ্রবাদী হিন্দু সম্প্রদায় শত শত খ্রিস্টান আদিবাসীকে হত্যা করে। বাস্তুচ্যুত হয় লাখ লাখ মানুষ। খ্রিস্টানদের চার্চগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নিপীড়ন-নির্াতনের শিকারে পরিণত হয় অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও।
সম্প্রতি সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের দুই নারীর উপর নির্মম নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জ্বলে উঠে মনিপুর। কুকিরা ফের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সেখানে এখনো বিজেপির দমন-পীড়ন চলছে।
কেন্দ্রীয় বিজেপির চাপে ভারতের মূলধারার মিডিয়া মনিপুর রাজ্যের সংখ্যালঘু নির্াতনের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশি গণমাধ্যম। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের সমসাময়িক সময়ে মনিপুরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মূল ধারার গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে কোটি কোটি বাংলাদেশি সেখানকার সংখ্যালঘুদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
ইতিহাস বলছে, ১৮২৪ সালে বার্মার আক্রমন থেকে ব্রিটিশ শাসনভুক্ত হয় পাহাড়ি রাজ্য মনিপুর। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার দুই বছর পর মনিপুর ভারতের সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৫৬ সালে কেন্দ্র শাসিত রাজ্য এবং সবশেষ ১৯৭২ সালে ভারতের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করলেও এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেন জন্ম থেকেই জ্বলছে।