Tuesday, August 26, 2025
More
    Homeসংবাদবাংলাদেশে এনআইডি সংশোধন: এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন

    বাংলাদেশে এনআইডি সংশোধন: এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন

    আব্দুল রশিদের বয়স ৩৫ বছর। কিন্তু এনআইডি অনুসারে, তার বয়স ১০৪ বছর। ফলে রশিদের বয়স হয়ে গেল তার বাবার চেয়েও ৫৩ বছর বেশি!

    নেত্রকোনার দুর্গাপুরে নিজের একটি নতুন বাড়ি হবে―এমন সাধারণ স্বপ্নই ছিল আব্দুল রশিদের। কিন্তু এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলেই বাধে বিপত্তি। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু যখন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাই করার পালা এলো, তখনই সব ভেস্তে গেল।

    আব্দুল রশিদের বয়স ৩৫ বছর। কিন্তু এনআইডি অনুসারে, তার বয়স ১০৪ বছর। ফলে রশিদের বয়স হয়ে গেল তার বাবার চেয়েও ৫৩ বছর বেশি!

    দুর্ভাগ্যবশত, এ ঘটনা কিন্তু শুধু রশিদের সঙ্গেই ঘটেনি। বাংলাদেশি হয়ে আপনার এনআইডিতে যদি কোনো ভুল না থাকে, তাহলে আপনি দেশের সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তিদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন।

    নাগরিকদের নির্ভুল ও নিরাপদ পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো তাদের জীবনকে সহজ করা। এর পরিবর্তে, এই এনআইডি প্রদান ব্যবস্থাই হয়ে উঠেছে  মাথাব্যথার কারণ। বানান ভুল থেকে শুরু করে হাস্যকর জন্মতারিখ, ভুল পারিবারিক সম্পর্কসহ আরও নানা ভুল এখন এতটাই স্বাভাবিক যে এগুলো হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে যার এনআইডিতে ভুল থাকে, তাদের জন্য কিন্তু বিষয়টি মোটেও হাস্যকর নয়।

    জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৭৫ বছর বয়সী মোসলিম উদ্দিনের এনআইডিতে বয়সের ভুল থাকায় বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার কার্ড অনুসারে, তিনি ১৯৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ কার্ড অনুসারে তার বয়স ৬৬ বছর। মোসলিম উদ্দিন তার ১৯৬৩ সালে জন্ম নেওয়া ছেলের চেয়ে মাত্র চার বছরের বড়!

    মোসলিম বলেন, “আমি বিভিন্ন সাহায্য সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েই জীবনযাপন করি। কিন্তু এই ভুলের কারণে আমার যেটা প্রাপ্য, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”

    এই ভুল সংশোধনের জন্য তিনি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার কম্পিউটার অপারেটর তার কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ দাবি করেন।

    রাঙ্গুনিয়ার নুরুল ইসলাম বলেন, তার এনআইডিতে মায়ের নামের জায়গায় তার স্ত্রীর নাম লেখা আছে। “আমি কয়েক বছর আগে এটি সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু এখনও এর সমাধান হয়নি। আমার এনআইডি অনুসারে, আমার স্ত্রী এখন আমার সন্তানদের দাদি। ব্যাপারটা হাস্যকর।”

    ঘটনাগুলো হাস্যকর হলেও এসব ভুল তাদের দৈনন্দিন জীবনে ও সন্তানদের শিক্ষাগত অসিফিয়াল নথিতে বড় সমস্যা তৈরি করছে।

    পাবনার ঈশ্বরদীর বাদল সরকার কখনো কল্পনাও করেননি, একটা সাধারণ টাইপো তার জন্য এমন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে। এনআইডিতে তার নাম ভুল করে লেখা হয়েছিল ‘বাদল ডার্কার’ (Badal Darker)। এই ভুল সংশোধনের জন্য তিনি অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সে সময় তার আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়।

    ভুলটি সংশোধন করার জন্য তিনি ঢাকার নির্বাচন কমিশনের পুরো কার্যালয়ে চক্কর দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান না করে শুধু একটি স্বাক্ষর নিয়ে তাকে পাবনার স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে হাল ছেড়ে দিয়ে বাদল অবশেষে ‘শর্টকাট’ পথ―দালাল― ধরেন।

    বাংলাদেশে এনআইডি সংশোধন: এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন

    এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া কি এত জটিল হওয়া উচিত? ছবি: মেহেদি হাসান

    দালাল প্রথমে বাদলের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। দর কষাকষি করে শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকায় এনআইডি সংশোধন করান তিনি।

    বাদল বলেন, ‘ঢাকা-পাবনা দৌড়াদৌড়ি করে করে একদিন চলে যাচ্ছিলাম। তখন একজন দালাল আমাকে একদিনে সবকিছু ঠিক করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি জানতাম, এটা সঠিক পথ না। কিন্তু সত্যি বলতে, আমার এ ঢাকা-পাবনার চক্র কবে শেষ হবে আমি জানতাম না। তাই এ পথ ধরেছি।”

    রংপুরের আল আমিনের এনআইডিতে টাইপোর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ২০১৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেও এখনও স্মার্ট কার্ড পাননি তিনি। কয়েক বছর অপেক্ষা করার পর তিনি ওয়েবসাইট থেকে তার এনআইডি প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করে নেন।

    আল আমিন বলেন, “আমি বছরের পর বছর অপেক্ষা করছিলাম। সাত বছর ধরে শুনছি, নির্বাচনের আগে স্মার্ট কার্ড আসবে। কিন্তু দুটি নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনও আমার স্মার্টকার্ড পাইনি।”

    নাম না প্রকাশের শর্তে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের কাছে পর্যাপ্ত স্মার্ট কার্ড নেই। নির্বাচনের আগে আমরা নির্দিষ্ট এলাকায় সেগুলো ইস্যু করি, কিন্তু নতুন ব্যাচ এলেও সংশোধনের অনুরোধের ব্যাপক চাপের কারণে সেগুলো যথেষ্ট নয়।”

    গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের সংস্কারের আশা ছিল। কিন্তু এনআইডি পরিষেবার ক্ষেত্রে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আগের চেয়েও নির্ঝঞ্ঝাট আর দক্ষ প্রক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নাগরিকরা এখনও একই সমস্যা মোকাবিল করে যাচ্ছে।

    নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বর্তমানে চার ক্যাটাগরিতে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০টির বেশি এনআইডি সংশোধনের আবেদন অপেক্ষমাণ অবস্থায় আছে। প্রক্রিয়াটি যন্ত্রণাদায়ক রকমের ধীর। সেইসঙ্গে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আবেদনকারীকে হও অনলাইনে আবেদন করে এনআইডি ওয়ালেটের মাধ্যমে চার্জ জমা দিতে হয়, অথবা ক্লান্তিকর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করতে হয়। এরপরও প্রত্যাখ্যানের হার বেশি। আর ম্যানুয়াল আবেদন করে মাসের পর মাস মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে।

    বাংলাদেশে এনআইডি সংশোধন: এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন

    সর্বশেষ

    অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে ৩৪ লাখ টাকার গহনা চুরি

    সাহসী পোশাক পরে প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসেন খুশি মুখার্জি।...

    ১৫০ টাকায় মাঠে বসে দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ

    সিলেটে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার তিন ম্যাচের...

    গাজায় ইসরাইলি হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিক নিহত

    ঢাকা, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): ইসরাইলি হামলায় মাত্র দুই...

    অব্যাহতি ও ভ্যাট ফাঁকিতে বছরে ১.৮৮ লাখ কোটি টাকা...

    ভ্যাটের কার্যকর হার ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ধরে সিপিডি...

    আরও সংবাদ

    অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে ৩৪ লাখ টাকার গহনা চুরি

    সাহসী পোশাক পরে প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসেন খুশি মুখার্জি।...

    ১৫০ টাকায় মাঠে বসে দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ

    সিলেটে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার তিন ম্যাচের...

    গাজায় ইসরাইলি হামলায় আল জাজিরার সাংবাদিক নিহত

    ঢাকা, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): ইসরাইলি হামলায় মাত্র দুই...