পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি’র সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও শারীরিক নির্যাতনের পর চার কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন মেডিকো কোচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা জোবাইদুর রহমান জনি।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এঘটনায় মোহাম্মদ আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান ভুক্তভোগী জনি। অভিযুক্ত অন্য তিনজন হলেন- এএসপি জুয়েল চাকমা, এসআই মেহেদি হাসান ও আতিকুর রহমান।
জনি অভিযোগ করে বলেন, আমার নামে কোনো থানায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি জালিয়াতির ব্যাপারে কোনো জিডি এবং মামলা নেই। এমনকি আমাকে যেই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সেটার এজাহারেও আমার নাম ছিল না। তাহলে কোন আইনে তারা আমাকে গ্রেফতার করেছে। আমাকে তুলে নেওয়ার সময় কোনো ওয়ারেন্টও তারা দেখাতে পারেনি।
জোবাইদুর রহমান জনি বলেন, কোনো তদন্ত ছাড়া ২০২৩ সালের ২ আগস্ট আমার নিজ বাসা থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় সাদা পোশাকের পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তারপর আমাকে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে আমাকে দীর্ঘ সময় শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর জোরপূর্বক বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও শিক্ষার্থীদের নাম লিখানো হয়৷ পরবর্তী নামগুলো ভিডিওতে বলে নেওয়া হয়।
টাকা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট মালিবাগের স্কাই সিটি হোটেলে ডাকা হয়। তারপর আরও মামলা, নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে মোট পাঁচ কোটি টাকা দাবি করা হয়। পরে আমি আটক থাকা অবস্থায় ও জামিনের সময় মোট ছয় কিস্তিতে চার কোটি টাকা আদায় করা হয়। এটির পর আমাদের পক্ষে আর টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করি। টাকা নেওয়া হয় আগারগাঁও আইসিটি ভবনের পাশের রাস্তায়।
মেডিকোর প্রধান বলেন, আমাকে তুলে নেওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং চাঁদার জন্য। এটি না হলে আমার থেকে কেনো ২০০৫ সালের মেডিকেল ভর্তির ব্যাপারে জোরপূর্বক স্টেটমেন্ট নেওয়া হবে। কারণ তখন বিএনপির ক্ষমতায় ছিল। আর আমি মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। এছাড়া সর্বশেষ যুবদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি ২০০৫ সালে মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম। তখন কয়েকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করাতাম। কিন্তু আমার ব্যাপারে অভিযোগ করা হয় ২০০৫ সালের মেডিকেল কলেজে জালিয়াতি ও প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে ভর্তি করানোর মূল হোতা আমি। এদিকে আমার কোচিং সেন্টার চালু হয় ২০০৫ সালের অনেক পড়ে। তাদের আরও অভিযোগ আমার কোচিং থেকে কীভাবে এত শিক্ষার্থী চান্স পায়। মেডিকোর চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী অন্যান্য কোচিং থেকে চান্স পায়। আমাকে হেনস্তা ও কোচিং সেন্টার বন্ধের জন্য তারা ষড়যন্ত্র করে।
টাকা আদায়ের জন্য নতুন মামলায় পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞেসা করতে চিঠি প্রদান করা হয়। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া হয় নিয়মিত হুমকি। এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয় বলে জানান জনি।
টাকা লেনদেনের ব্যাপারে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, স্কাই সিটি হোটেল ও আগারগাঁওয়ের রাস্তার সিসি টিভি ফুটেজ দেখলেই আপনারা বুঝবেন। এছাড়া এসআই মেহেদি হাসান আমার আত্মীয়দের গাড়িতে তুলে মাথায় বন্দুক ধরে টাকা আদায়ের ব্যাপারে হুমকি দেন।