পাচার হওয়া সম্পদ কোথায় কোথায় গেছে, তা খুঁজে বের করতে বিদেশি ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেছেন, “আমরা বিভিন্ন ল-ফার্মের সাথে কথা বলছি।তাদের খুব শিগগিরই হয়ত হায়ার করব।”
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য একদমই নতুন।এটা দেশের আইনে হবে না। বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ করতে হবে।আর্ন্তজাতিক আইনের সাথে সংগতি রেখে আমাদের কার্য প্রণয়ন করে সেটাকে আনার চেষ্টা করতে হবে।
“প্রথমে চেষ্টা করতে হবে পাচার হওয়া সম্পদগুলোকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনার। আমরা পাচার হওয়া অ্যাসেটগুলোকে ফ্রিজ করার চেষ্টা করছি।সেজন্য বিভিন্ন দেশের যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সাথে আলাপ করার চেষ্টা করছি।বিভিন্ন লিগ্যাল অ্যাসিস্টেন্সের বিষয় চিঠি পাঠাচ্ছি।”
আহসান মনসুর বলেন, “কিছু ফার্মের সাথে কথা বলছি যারা অ্যাসেট ট্রেসিংয়ের কাজ করে। মানে কার সম্পদ কোথায় আছে সেটাই তো জানি না। কাজেই তথ্য নিয়ে আসতে হবে। আমরা যদিও কিছু তথ্য জানি, সেগুলো ভাসা ভাসা। স্পেসিফিক, সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া অন্য কিছু কোর্টে গ্রহণযোগ্য হবে না। এজন্য বিদেশি অ্যাসেট ট্রেসিং ফার্মগুলোর মাধ্যমে সম্পদ কোথায় আছে সেসব শনাক্ত করতে হবে।
“আমরা কিছু সহযোগিতা পাচ্ছি বিদেশিদের কাছ থেকে। তারপরও বিষয়টা সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটা দেশে অ্যাসেট যেন ফ্রিজ করতে পারি, এটা ইনিশিয়াল অ্যাচিভমেন্ট। ফ্রিজ হওয়ার পর যেটা হয় বিষয়টি কোর্টে যাবে মামলা মোকাদ্দমা হবে। এরপর অ্যাসেট ফিরে পাবার সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আপসের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ‘আউট অব কোর্ট সেটলনেন্ট‘ বলে একটা বিষয় আছে। সব জিনিসে সবসময় মামলার দীর্ঘসূত্রতায় যাওয়ার মানে হয় না। প্রতিপক্ষকে আমরা কতখানি শক্তভাবে ধরতে পারি! যদি ভালোভাবে ধরা যায় তাহলে আপসটাও ভালোভাবে হয়।
“ভালোভাবে ধরতে না পারলে ভালো ফল দেবে না। সেজন্য আমাদের অ্যাসেট ট্রেসিং করতে হবে। আমাকে জানতেই হবে কত টাকা নিয়ে গেছে। যখন তারা জানবে আমরা অনেক বিষয় জানি, তখন তারা আপসে আসতে চাইবে।”
এসআলম গ্রুপের দিকে ইংগিত করে গভর্নর বলেন, চট্টগ্রামেরই একটি ‘বড় শিল্পগ্রুপ’ অন্তত দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।
“এটি শুধু নিয়ে গেছে ব্যাংকিং খাত থেকে। সেরকম আরও বেশ কিছু আছে। যেমন বেক্সিমকোর পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। আরও অনেকগুলো আছে যারা ৩০ হাজার, ৪০ হাজার ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। বড় শিল্প গ্রুপগুলো কয়েকটি মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।”
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং সমসাময়িক ব্যাংকিং বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা করেন গভর্নর। এরপর তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
শুরুর বক্তব্যে হোসেন মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল দায়িত্ব হচ্ছে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা।
“আমরা মনে করি যে এ বিষয় বেশকিছু সাফল্য অর্জন করেছি। পুরোপুরিভাবে পারিনি। আরও হবে আশা করি। আমাদের রির্জাভ স্থিতিশিল অবস্থায় আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, বিভিন্ন ধরনের গোলোযোগ আন্দোলন ইত্যাদি সত্ত্বেও রপ্তানি কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে নাই।”
রেমিটেন্সের প্রবাহও ‘উৎসাহব্যাঞ্জক’ মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, “গত কয়ক মাসে ২৬-২৭ শতাংশ গ্রোথ দেখছি। এ ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আমরা আশা করি। সবমিলিয়ে অর্থনীতি একটা স্বস্তির জায়গায় চলে এসেছে। বড় ধরনের কোনো ক্রাইসিস আছে বল আমি মনে করি না। আমরা সেখানে সুদৃঢ় অবস্থায় আছি।”