রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে বিএনপির একমত না হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হবে আগামী ১৬ এপ্রিল; যেখানে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়া হবে বলে তুলে ধরেছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বুধবার বলেন, সেদিন (১৬ এপ্রিল) বেলা ১২টায় এ বৈঠকের সূচি ঠিক হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপিকে নিয়ে নানান খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে এদিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সালাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকসহ এসব বিষয় পরিষ্কার করেন। বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সাথে আমরা সাক্ষাৎ করার জন্য সময় চেয়েছি। উনার সাথে সাক্ষাতের পরেই আমরা এ বিষয়ে (নির্বাচনের বিষয়) কথা বলব।
‘‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের আগে একটা রোডম্যাপ অবশ্যই চাইব। যাতে উনি ক্লিয়ারলি জাতির সামনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করেন, যাতে জাতির মধ্যে যে একটা অনিশ্চিত-অস্থিরতার যে ভাব আছে এবং রাজনীতিতে যাতে স্থিতিশীলতা আসে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যাতে একটা গতিশীলতা আসে সেগুলো লক্ষ্য রেখে আমরা বলব যে, এটা যথেষ্ট সময়।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তারা (নির্বাচন কমিশন) জুনের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সমাপ্ত করতে পারবে এবং প্রধান উপদেষ্টা ইতোপূর্বে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
‘যেহেতু বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে সেটা পরিষ্কার করার জন্য আমরা উনার কাছে এই আহ্বান জানাব।”
‘ধর্মনিরপেক্ষতা-বহুত্ববাদের’ সঙ্গে একমত নয় বিএনপি
সংবাদ সম্মেলনে সালাহ উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদ এর সঙ্গে একমত নয় বিএনপি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের ৫, ৬ ও ৭ এ সংবিধানের মূলনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে উনারা যেটা বলেছেন, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের কথা বলেছেন, সাম্য-মানবিক মর্যাদার কথা বলেছেন। বাট বহুত্ববাদসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে আমরা (বিএনপি) একমত নই। এই ব্যাপারে আমাদের মন্তব্যও কমিশনকে দিয়েছি।
‘‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলো সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২- এই অনুচ্ছেদগুলোতে বলা আছে। সেই অনুচ্ছেদগুলোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনে যে সুপারিশ করা হয়েছে যে, তারা একই বিষয়গুলো রিপ্লেস করতে চেয়েছেন। যেমন একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, ধর্ম নিরপেক্ষতা ইত্যাদি এগুলো বিলুপ্ত করা হোক। এখন বিভ্রান্তিটা ওই জায়গায়। আমরা সেখানে বলেছি যে, এটাতে (ধর্মনিরপেক্ষতা) একমত নই। কিন্তু কী কী চাই সেটাও আমরা বলেছি।”
ব্যাখ্যা দিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছি যে, পঞ্চম সংশোধনীতে যেটা গৃহীত হয়েছে যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থা, সেটা আমরা বহাল করা হোক সেটা আমরা চেয়েছি। কিন্তু সবাই মনে করেছে যে, ধর্ম নিরপেক্ষতা বাতিলের কথা বলেছেন। আপনারা সেটাতে একমত নন কেন?
‘‘বিষয়টা তা নয়। আমরা পরিষ্কার করার জন্য বলেছি যে, আপনাদের (সংস্কার কমিশনের) প্রতিস্থাপন বহুত্ববাদসহ অন্যান্য বিষয় ও এগুলো একসাথে আসতে হবে। তখন আমরা কেন একমত নই এবং কেন আমরা বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে পূর্বে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের কাছে আমরা বলেছি আবারও।
“অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ‘মহান আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার’…এ বিষয়গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে। যেটা পঞ্চম সংশোধনীতে গৃহীত হয়েছিলে বাকশালের বিলুপ্তির পরে। আশা করি এ নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না।”
‘রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘সংবিধানের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়েও কথা বলছি। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে আমরা যেসমস্ত প্রস্তাব দিয়েছি তা কি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনী আনি নাই আমরা? আমরা উপরাষ্ট্রপতি, উপপ্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব করেছি। উভয় কক্ষে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নিয়ে আসার প্রস্তাব করেছি, আমরা দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব করেছি।
‘‘আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নের প্রস্তাব করেছি, নতুন করে কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। আমরা সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৫০ থেকে ১০০ আসনে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।