Saturday, April 19, 2025
More
    Homeমতামতশেখ মুজিব কোন আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেননি

    শেখ মুজিব কোন আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেননি

    আমিরুল ইসলাম কাগজী

    শেখ হাসিনা গত ১৭বছর ধরে দেশবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। তাই এদেশের ওপর মালিকানা একমাত্র তার এবং তার পরিবারের।সেজন্য তিনি ধরাকে সরাগার মনে করে গোটা জাতিকে তার পদতলে রাখার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। একই সঙ্গে দেশের সমুদয় সম্পত্তি তাদের পারিবারিক তালুকদারি মনে করে সবকিছু ব্যবহার করেছেন। তার সুরে সুর মিলিয়ে দলের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী উপদেষ্টা একই বয়ান প্রতিনিয়ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে জাতির ওপর। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিহাস জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস থেকে এক চুলও বিচ্যুত হয়নি।

    আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর থেকে। সে সময় নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য দেন দরবার জানিয়েছেন ১৫ মার্চ থেকে। তিনি ভেবেছিলেন যেহেতু ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে তার আলোচনা চলছে অতএব তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেনই। না হওয়ার কোন যুক্তি নেই। কারণ তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। যৌক্তিক কারণেই প্রধানমন্ত্রী তিনিই হবেন। সে কারণেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে ঘরেই বসে ছিলেন। বলতে গেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য তিনি বিকাল থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

    ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে ধরা দিলেন। সেখান থেকে তাকে ২৮ অথবা ২৯ মার্চ পাকিস্তানের নিয়ে লায়ালপুর কারাগারে রাখা হলো। সাথী হিসেবে ছিলেন তারই দলের আইন প্রণেতা ডঃ কামাল হোসেন। দুজন কারাগারের মধ্যে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে মুক্তি পেলেন জানুয়ারি মাসে। ৮ জানুয়ারি তিনি উড়াল দিয়ে চলে গেলেন লন্ডনে। সেখান থেকে ১০ জানুয়ারি ফিরলেন বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলো , প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের সরকার।

    বিতাড়িত হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। তিনি যখন গ্রেফতার হন বা আত্মসমর্পণ করেন তখন ছিল এটা পূর্ব পাকিস্তান ফিরে আসলেন বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাস যখন যুদ্ধ হলো তিনি কিন্তু কিছুই জানেন না। কারা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে কারা পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কত মানুষ জীবন দিয়েছে যুদ্ধে তার হিসাব কিন্তু তার কাছে নেই। তিনি লন্ডনে সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন যুদ্ধে ৩ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে যুদ্ধে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন ৩ লাখ মানে কি তিন মিলিয়ন? জবাবই তিনি বলেছিলেন হ্যাঁ। ৩ লাখ এবং ৩ মিলিয়নের মধ্যে যে পার্থক্য সেটা তিনি নির্ণয় করতে পারেননি।

    আর তার সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। এটা প্রমাণ করার জন্য শহীদদের তালিকা তৈরি করার একটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল শেখ মুজিবের সরকারের আমলেই। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জরিপ চালানোর সময় চিত্র ছিল ভিন্ন ৩০ লাখ তো দূরের কথা ৩ লাখ মানুষ সাদাত বরণ করেছে কিনা সেটা নিয়েই তাদের মনে সন্দেহ দেখা দেয়। ফলে শহীদদের তালিকা তৈরি করার সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

    এ ব্যাপারে অবশ্য লরেন্স লিফসুজ সে সময়কার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারীর কাছে বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর একটা ছো প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধে অপরাধীদের যখন বিচার চলে তখন শহীদদের তালিকা নিয়ে ডেভিড বার্গম্যান প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে লরেন্স লিফসুজ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরীর ব্যাপারে শেখ মুজিব সরকার আমলের উদ্যোগকে সামনে এনে একটি প্রতিবেদন হাজির করেছিলেন। সে এক লম্বা ইতিহাস।

    আবার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। শেখ মুজিব যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দূরে থাক যুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তার বড় প্রমাণ হচ্ছে দীর্ঘ ৯ মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। এমনি করে যদি বিশ্লেষণ করা যায় তিনি কিন্তু কোন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেননি শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের দিন অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের সামনে যখন ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল সেদিনও শেখ মুজিব ছিলেন কারাগারে বন্দি। শেখ হাসিনা কিন্তু সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার বাবাকেই কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন। বলে থাকেন তার বাবা কারাগার থেকে চিরকুট পাঠিয়ে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেটাও ছিল একটা ভুয়া তথ্য।

    শেখ মুজিবের আত্মজীবনীতে চিরকুট লেখার একটা তথ্য পাওয়া যায়। তিনি তখন ছিলেন ফরিদপুর কারাগারে ।সেখান থেকে তিনটি চিঠি তিনি দিয়েছিলেন। একটি চিঠি তার পিতা শেখ লুৎফুর রহমান দ্বিতীয় চিঠি তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা রেনু এবং ফরিদপুর আওয়ামী লীগ নেতার কাছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা করার যে জনপ্রিয় আন্দোলন সেসময় তিনি কারাবন্দী।

    এর পরে আসা যায় আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা- ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খানের পৃষ্ঠপোষকতায় আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিলে গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে নবকুমার ইন্সটিটিউশনের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও রিকশাচালক রুস্তম আলী নিহত হন।এই হত্যার পর আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ক্ষমতার পাদপিটে হাজির হন ইয়াহিয়া খান।

    ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয়। সাথে সাথে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল কারাবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। পরেরদিন, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ মামলায় অভিযুক্তদের এক গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। অর্থাৎ শেখ মুজিব কখনোই কোন আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেননি। অন্যরা নেতৃত্ব দিয়েছেন আর ফল ভোগ করেছেন শেখ মুজিব। ইতিহাস তাহাই বলে।

    তবে হ্যাঁ শেখ মুজিব যখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কর্মী ছিলেন তখন তিনি নেতার কথা মত অনেক কাজ করেছেন। কলকাতায় অবস্থানকালে মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের সময় নির্বাচনের ফলাফল সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে নেওয়ার জন্য যা যা দরকার সবকিছু করতেন শেখ মুজিব। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার সময় তিনি রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছেন।

    সর্বশেষ

    গাজায় স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ: বোমারু বিমানে ছিন্নভিন্ন ফটো সাংবাদিক ফাতেমা

    জেড নিউজ ডেস্ক গাজার তরুণ ফটো সাংবাদিক ফাতেমা হাসসুনা জানতেন,...

    ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন...

    বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় জামায়াত নেতা আটক

     সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় থানা ফটকের সামনে বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায়...

    ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন...

    আরও সংবাদ

    গাজায় স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ: বোমারু বিমানে ছিন্নভিন্ন ফটো সাংবাদিক ফাতেমা

    জেড নিউজ ডেস্ক গাজার তরুণ ফটো সাংবাদিক ফাতেমা হাসসুনা জানতেন,...

    ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন...

    বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় জামায়াত নেতা আটক

     সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় থানা ফটকের সামনে বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায়...