Saturday, April 19, 2025
More
    Homeমতামতবিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গ

    বিডিআর বিদ্রোহ প্রসঙ্গ

    আমিরুল ইসলাম কাগজী

    ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা আমরা সাদা চোখে যা দেখেছি তার বর্ণনা এ রকমঃসকাল দশটায় টিভি চ্যানেলগুলো বলতে শুরু করলো পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে গোলাগুলি হচ্ছে। সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংকবহর নিয়ে বিদ্রোহ দমনের জন্য জিগাতলা, ধানমন্ডি এবং নিউমার্কেট আজিমপুর এলাকায় অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু তারা ভেতরে প্রবেশ করে নাই। বিকাল বেলা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দানকারী বিডিআর সদস্যদের ডেকে নিলেন। তাদের সঙ্গে কি আলাপ-আলোচনা হল দেশবাসী জানেনা। গভীর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানায় গেলেন এবং বিদ্রোহের অবসান ঘটালেন। পরের দিন দুপুর নাগাদ খবর আসতে থাকলো পিলখানার ভেতরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতবিক্ষত লাশে সয়লাব।একই দিন দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় আরো বিডিআর বিদ্রোহ হল এবং সেগুলো দমন করা হলো । এরপর মামলা হল। বিএনপির ঢাকা মহানগরীর প্রভাবশালী নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুকে গ্রেফতার করা হলো এবং তিনি জেলখানাতেই মৃত্যুবরণ করলেন।মামলা হলো। তদন্ত কমিশন হলো।কোথাও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম নেই।তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করে থাকেন।

    আমাদের জানার দৌড় এতটুকুই। কিন্তু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর সহযোগী অধ্যাপক অভিনাষ পালিওয়ালের এতটুকু জানলে তো চলবে না। তাকে ঘটনার ভেতরে নাড়ি নক্ষত্র সবকিছুই জানতে হবে। কারণ দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে অনেক কিছুই জানা তার অধ্যয়নের অংশ। সেই অবিনাষ পালিওয়াল গত ৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডি.সি. ভিত্তিক খ্যাতনামা ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বেশ খোলামেলা কথা বলতে গিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়টি সামনে এনেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন বিডিআর বিদ্রোহের পুরো ঘটনার সঙ্গে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ।

    পালিওয়াল বলেন,”সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি নির্বাচন সম্পন্ন করে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তবে, তা করার আগে তিনি নয়াদিল্লি থেকে এই নিশ্চয়তা নিয়েছিলেন যে, শেখ হাসিনা পরে তাকে টার্গেট করবেন না।

    শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক মাস পর ২০০৯ সালে তখনকার বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) বিদ্রোহ হলে ওই অ্যারেঞ্জমেন্ট প্রশ্নের মুখে পড়ে।বিদ্রোহ যখন চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে তখন শেখ হাসিনার পক্ষে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিল নয়া দিল্লি। ভারতে তখনকার কংগ্রেস নেতৃত্ব আশঙ্কা করেছিলেন যে, যদি জেনারেল মঈন উ আহমেদ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করেন, তাহলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং অকালে তার ক্ষমতাচ্যুতি বা তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। সেনাবাহিনী বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একেবারে চোখের সামনে।তারপর অফিসারদের দুর্দশার কথা শুনে সফলভাবে তাদেরকে শান্ত করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।

    পালিওয়ালের এই সাক্ষাৎকার বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এটা দেখার পর সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ এর একটা বক্তব্য আশা প্রয়োজন ছিল। তিনি যেহেতু কিছুই বলেননি তাই এই সাক্ষাৎকারের বক্তব্য সঠিক বলেই ধরে নেওয়া যায়। তাহলে পালিওয়ালের বক্তব্য মোটা দাগে বিশ্লেষণ করলে

    তিনটি বিষয় পরিষ্কার হয়ঃ
    ১.বিডিআর বিদ্রোহ দমন করার জন্য জেনারেল মইন অগ্রসর হয়েছিলেন।
    ২.জেনারেল মইনের পদক্ষেপ থামানোর জন্য নয়া দিল্লি সেনা হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিল
    ৩.প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেনারেল মঈনকে বিদ্রোহ দমন থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হন।ফলাফলঃবিডিআর বিদ্রোহের ফলে ৫৭ জন সেনা অফিসার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিকভাবে জীবন দিতে হলো।পালিওয়াল বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরের দিন সেনা অফিসারদের শান্ত করতে সক্ষম হন। তবে বিস্তারিত কিছু তিনি বলেননি।

    প্রিয় পাঠক আপনাদের এবার টাইম মেশিনে বসিয়ে ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনে আসতে পারি। তিনি সেদিন সকাল বেলা সেনা সদরে গিয়ে অফিসারদের তোপের মুখে পড়েছিলেন। সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বিরোধীদলের উদ্দেশ্যে বললেন, সেনা সদরের বক্তব্য এবং বিরোধী দলের বক্তব্য যেন একই সুরে গাঁথা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী সেদিন তাঁর অফিস ব্যবহার করে সেনা অফিসারদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন বটে কিন্তু তাদের মনের ক্ষত কি সারাতে পেরেছিলেন? তারপরও কিন্তু তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িয়ে বক্তব্য দেন। আবার কখনো বলেন,বিএনপি- জামায়াত এবং ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টিকারিরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।অথচ তিনি দাবি করেন তাঁর আন্দোলনের ফসল ওয়ান ইলেভেন।তাহলে বিডিআর বিদ্রোহের পুরো দায় তাঁর ওপর বর্তায়। এমন লাগামছাড়া অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়।

    বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার পর নিয়মিত মামলা করা ছাড়াও একই বছর ২ মার্চ সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব আনিস-উজ-জামান খানকে সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, বিডিআরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব এহছানুল হক, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহ, সশস্ত্র বাহিনীর তিনজন প্রতিনিধি যথাক্রমে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির, পরিচালক আর্টিলারী, কমডোর এম নাসির, নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, এয়ার কমডোর এম সানাউল হক, জিডি (পি) এয়ার অফিসার কমান্ডিং, ঘাঁটি বাসার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শক নব বিক্রম ত্রিপুরা, সেনা সদরের জাজ এডভোকেট জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূর মোহাম্মদ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম হোসেন।

    তদন্ত কমিটির কর্মপরিধির মধ্যে ছিল ঘটনার পটভূমি ও কারণ উদঘাটন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা। এই কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের সাথে তার কোন সামঞ্জস্য নেই। এই কমিটি কোথাও বলেনি যে, সরকার উৎখাতের জন্য পিলখানা হত্যাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে এবং এর সাথে বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দল, বেগম জিয়া অথবা তার পুত্র তারেক রহমান সম্পৃক্ত ছিলেন। বরং তদন্ত রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততার আশংকাই বেশি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। বিদ্রোহের পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে কমিটির মন্তব্য ছিল উল্লেখ করার মত ঘটনা। এতে বলা হয়েছে যে, কমিটি তদন্তকালে প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেও বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাকারী কারা ছিল তা সনাক্ত করতে পারেনি। এজন্য তারা কমিটির সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছে এবং আরো তদন্তের সুপারিশ করেছে।

    বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদঃ
    ফেব্রুয়ারির ২৫-২৬ তারিখ বিডিআর বিদ্রোহের পর কয়েকটি ঘটনা খুব দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।এর মধ্যে ২ মার্চ তদন্ত কমিটি করা এবং ৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া অন্যতম। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণর ১১দিনের মাথায় ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে ১৫ দিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে নোটিশ দেয় সামরিক ভূমি কর্তৃপক্ষ। এ নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া ওই বছরের ৩ মে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন।রিট শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিলে তার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।আপিল শুনানি না করেই ২০১০ সালের১৩ নভেম্বর তাঁকে টেনে হেঁচড়ে ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি এই বাড়িতে বসবাস করেন।
    বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার পর দিনই সেটা ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে নিহত ৫৭ জন সেনা অফিসারের পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

    ঘটনাগুলো সব রকেট গতিতে সম্পন্ন করা হয় যাতে কেউ এটা নিয়ে আন্দোলন করার সুযোগ না পায়।তারপরও বিএনপি হরতালসহ বেশকিছু আন্দোলন করে যাকিনা পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ারশেল ও গুলির মুখে ক্ষান্ত দিতে বাধ্য হয়।

    সর্বশেষ

    গাজায় স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ: বোমারু বিমানে ছিন্নভিন্ন ফটো সাংবাদিক ফাতেমা

    জেড নিউজ ডেস্ক গাজার তরুণ ফটো সাংবাদিক ফাতেমা হাসসুনা জানতেন,...

    ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন...

    বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় জামায়াত নেতা আটক

     সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় থানা ফটকের সামনে বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায়...

    ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন...

    আরও সংবাদ

    গাজায় স্বপ্নভঙ্গের আর্তনাদ: বোমারু বিমানে ছিন্নভিন্ন ফটো সাংবাদিক ফাতেমা

    জেড নিউজ ডেস্ক গাজার তরুণ ফটো সাংবাদিক ফাতেমা হাসসুনা জানতেন,...

    ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

    প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন...

    বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় জামায়াত নেতা আটক

     সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় থানা ফটকের সামনে বিএনপি নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায়...