Wednesday, May 7, 2025
More
    Homeরাজনীতিভোট না হলে এত কিছু করবেন কীভাবে? নাসিরুদ্দীনকে প্রশ্ন শামা ওবায়েদের

    ভোট না হলে এত কিছু করবেন কীভাবে? নাসিরুদ্দীনকে প্রশ্ন শামা ওবায়েদের

    জুলাই-অগাস্টের গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথরেখা সন্ধানের জাতীয় সংলাপে উঠে এসেছে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে বিতর্কও; ভোট আর সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্ন রকম বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

    মঙ্গলবার নাগরিক কমিটি আয়োজিত এ সংলাপে এ সংগঠনের আহ্বায়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারীকে উদ্দেশ করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, “পাটোয়ারী সাহেব বলেছেন, আপনারা ক্ষমতায় গেলে এটা এটা করবেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন আপনারা ক্ষমতায় কীভাবে যাবেন?

    “প্রথমত, আপনাদেরকে একটা দল করতে হবে, দল করে ইলেকশনে যেতে হবে, ইলেকশনে জিতলে আপনারা ক্ষমতায় যাবেন। তারপর ক্ষমতায় গেলে আপনারা অনেক কিছু করতে পারবেন। ঠিকাছে, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু ক্ষমতায় যে যাবেন, তার জন্য তো ভোট দরকার ভাই।”

    ঢাকার ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘গণ-অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: নতুন দিগন্তের সন্ধানে’ শীর্ষক ওই সংলাপের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি সেল’।

    সংলাপের ‘গণ অভ্যুত্থান-উত্তর পররাষ্ট্রনীতির গতিমুখ’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় পররাষ্ট্রনীতি নতুনভাবে গড়ে তোলার কথা বলেন নাগরিক কমিটির আহ্বান নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী।

    তিনি বলেন, কৌশলগত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য বড় আকারের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। যেটা ভারতসহ অন্যান্য দেশে রয়েছে। অবকাঠামোখাতে তাদের কাজের জায়গা তৈরি করা হয়নি।

    বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্ব পর্যায়ে নেতৃত্বের জায়গায় যাওয়া নিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার উপর গুরুত্ব দেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক।

    তিনি বলেন, “আমরা যদি ভবিষ্যতে কোনো জায়গায় সুযোগ পাই, তাহলে আমরা এই বিষয়গুলোকে ফোকাস করব। নিজেদের জায়গা থেকে কঠোর থেকে চেষ্টা করব। তা না হলে এই পৃথিবীতে কৌশলগত অবস্থানের জায়গায় আমরা টিকে থাকতে পারব না।”

    নতুন বাস্তবতায় পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “৭১ সালের মধ্য দিয়ে যে সাবমিসিভ অবস্থায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আমরা ২৪-এ রক্তের মধ্য দিয়ে তা পুনরায় অর্জন করেছি।

    “আমাদের সামনে এখন বিষয়, আমরা কি সেটাকে আরও সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দেব, না কি এই যে আমাদের অর্জন, রক্তের মধ্য দিয়ে, সামনের বাংলাদেশে টেনে নিয়ে যাব। এটার দেখভাল তরুণ প্রজন্মকে করতে হবে। আমরা যদি করতে না পারি, বাংলাদেশের জনগণ আমাদেরকে অভিশাপ দেবে।”

    তিনি বলেন, “৭২ সালে এসে একটা দেশের কাছে আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি বিক্রি করে দিয়েছিলাম। এবং সে জায়গা থেকে আজ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াতে পারিনি। একটি দেশের সেবাদাস হিসেবে কাজ করে গেছি। বৈশ্বিক পর্যায়ে কীভাবে কী করা যায়, আমরা খোঁজার চেষ্টা করিনি।

    “পরবর্তীতে এটার বিস্তার গত ১৫ বছরে দেখেছি। এই ধরনের খুনীরা যে বিশ্বে টিকে থাকছে, তারা কিন্তু সেই জায়গায় বসে বসে ষড়যন্ত্রটা করছে।”

    নাসরিুদ্দীন বলেন, কেউ বাংলাদেশের শত্রু নয়, কিন্তু তথ্যভিত্তিক অবস্থানে থেকে নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরতে হবে। যেমন তিস্তার পানি নিয়ে সমাবেশ, সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তথ্যভিত্তিক। কেন পানির ন্যায্য হিস্যা দেওয়া হচ্ছে না, কেন সীমান্তে মানুষ মারা হচ্ছে। এগুলো বৈশ্বিক পর্যায়েও তুলে ধরতে হবে।

    তার এসব বক্তব্যের প্রেক্ষাপট টেনে পরে দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা শামা ওবায়েদ; যিনি দলটির আন্তর্জাতিক নীতি প্রণয়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

    ‘ভোট যতদিন না হবে, ততদিন ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ড. ইউনূসের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান এবং আস্থা রেখে বলতেছি, আমাদের যে বিদেশি বিনিয়োগ, সেটা বাংলাদেশের সঙ্গে সারা পৃথিবী সম্পর্কিত।

    “কিন্তু এর লিংক এত বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনার আমলে যা ছিল, এখনও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাই আছে। কোনো পরিবর্তন হয় নাই। শুধু এক নম্বর বদলাইছে।”

    তিনি বলেন, “ফরেন মিনিস্ট্রিতে এখনও অনেক লোক রয়ে গেছে। ৫ অগাস্টের পরে ভারতের মিডিয়াতে যেভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ইস্যুতে…

    “আমি মনে করি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে, এটার প্রতিবাদ করতে, এটার সঠিক জবাব দিতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে দিল্লির সাথে দরকষাকষি করতে। এখনও সচিব, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের লোকজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।”

    নাগরিক কমিটিকে খোঁচা দিয়ে শামা ওবায়েদ বলেন, “নাগরিক কমিটির মনে হয়, সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, আপনাদেরও বলা উচিত যে, এদেরকে বের করতে হবে; না হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐকমত্য পেতে অনেক সমস্যা হবে।”

    ‘দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পালাবদলে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক অধিবেশনে শামা ওবায়েদের আগে দেওয়া বক্তব্যে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ‘ভারত এখন বাংলাদেশে সংস্কারের বিরোধিতা’ করছে বলে মন্তব্য করেন।

    তিনি বলেন, “মজার ব্যাপার হচ্ছে, জানুয়ারির আগে ভারত বাংলাদেশে নির্বাচন চাইত না। তারা বলত, বাংলাদেশে নির্বাচন দিলে এখানে ইসলামি মৌলবাদীরা ক্ষমতায় চলে আসবে। সুতরাং আওয়ামী লীগকে বিনা ভোটে ক্ষমতায় রাখাটাই গণতন্ত্র। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মত পত্রিকায় এটা ছাপা হয়েছিল।

    “মজার ব্যাপার হচ্ছে, এখন প্রত্যেক দিন পালকি শর্মারা পাগল হয়ে গেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন দিচ্ছে না কেন? কী চায় ড. ইউনূস? এখন তারা সংস্কারের বিরোধিতা করছে।”

    সারোয়ার তুষার বলেন, “জানুয়ারি মাসে তারা নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে আর এখন তারা সংস্কারের বিরোধিতা করছে। জানুয়ারিতে নির্বাচন না চাওয়া এবং এখন বিরোধিতার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাঁড়াতে না দেওয়া। এই জায়গা থেকে বিষয়টা আমাদের দেখতে হবে।

    “আমি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাব, এমন তাড়াহুড়া যেন আমরা না করি, অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, কিন্তু এমন তাড়াহুড়া যেন আমরা না করি, যাতে সংস্কারগুলো ভেস্তে যায়। সেটা হলে তার বেনিফিশিয়ারি হবে দিল্লি।”

    বাংলাদেশে ‘সেকুলার বনাম ইসলাম’ বিভাজন রাখাটা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবং জুলাই-পরবর্তী সময়ে তারা এটা করে যাচ্ছে নানাভাবে।“

    এ অধিবেশনে বৈদেশিক চুক্তি ও বিনিয়োগের স্বার্থে রাজনৈতিক সরকারের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের গুরুত্বের কথা বলেন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজও।

    তিনি বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে আমাদের ভেতরের রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করতে হবে।“

    ববি হাজ্জাজ বলেন, “ঐকমত্য তৈরির ক্ষেত্রে বারবার রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করলে হবে না, এই ঐকমত্য তৈরির দায়িত্ব নিয়ে আমরা অনেক জায়গায় অনেক কথা শুনি, অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট এই রিফর্ম দাও, ওই রিফর্ম দাও।

    “এত কিছু চিন্তা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ অগাস্ট দাওয়াত দেওয়া হয় নাই। এত কোনো কিছু চিন্তা করে ৮ তারিখ তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় নাই। এত কোনো বিশাল ম্যান্ডেট তাদেরকে দেওয়া হয় নাই। সরকারের একটা শূন্যতা ছিল, এই শূন্যতা পূরণ করার জন্য যত শিগগির সম্ভব একটা অন্তর্বর্তী সরকার হওয়ার কথা ছিল।”

    প্রথম অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এস এম আলী আশরাফ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বক্তব্য দেন।

    দ্বিতীয় অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেন মানারত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রব এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

    সর্বশেষ

    জুলাই গণহত্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার

    জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার রক্তে হাত রাঙ্গানো আওয়ামী লীগ ও...

    ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের বর্ধিত আলোচনা

    সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে...

    মধ্য রাতে ভারতের হামলা, পাল্টা প্রতিরোধ পাকিস্তানের

    ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার টানা কয়েকদিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এবার...

    ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানে খুলে দেওয়া হলো ‘এক্স’

    ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও ভারতীয় হামলার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান...

    আরও সংবাদ

    জুলাই গণহত্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার

    জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার রক্তে হাত রাঙ্গানো আওয়ামী লীগ ও...

    ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের বর্ধিত আলোচনা

    সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে...

    মধ্য রাতে ভারতের হামলা, পাল্টা প্রতিরোধ পাকিস্তানের

    ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার টানা কয়েকদিনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি এবার...