Friday, June 6, 2025
More
    Homeমতামতসরকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কার লাভ কার ক্ষতি

    সরকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কার লাভ কার ক্ষতি

    আমিরুল ইসলাম কাগজী।

    জেড নিউজ, ঢাকা:
    ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গৌরবোজ্জ্বল অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলের অবসান হয়। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে গণমাধ্যম ছিলো নিয়ন্ত্রিত। ফ্যাসিবাদের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর সুযোগ কোনো সভ্য দেশে নেই।

    অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার সঙ্গে সরাসরি জড়িত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে কিছু কিছু গণমাধ্যম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে। সরকারের গুরূত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে এসব গণমাধ্যম মূলত ফ্যাসিবাদী শক্তির হাতকেই গোপনে শক্তিশালী করছে। দেশের মানুষের সামনে দেশপ্রেমিক বা গণমাধ্যম স্বাধীনতার কান্ডারি সেজে যেসব ব্যক্তি এমন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন সমাজের সামনে আজ হোক কাল হোক তাদের ভন্ডামির মুখোশ খুলে পড়বে।

    ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের পুলিশ, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারী প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থায় ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বঞ্চিত দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়। পুরোপুরি ভেঙে পড়া পরিস্থিতি থেকে এসব সংস্থাগুলো ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত শাসনামলের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমাণ অগ্রগতি হয়েছে।

    যারা নিয়মিত পত্রিকার পাঠক তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এই বছর দুই ঈদেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কম। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হয়েছে, চাঁদাবাজি কমেছে, দুর্নীতি কমেছে এবং এগুলোর ফসল সাধারণ মানুষ ভোগ করছেন। রাষ্ট্রের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ফলেই রাষ্ট্রের সামগ্রিক বাস্তবতায় এই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

    রাষ্ট্রের সামগ্রিক ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রধান শর্ত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আইন, বিধিমালা এবং নীতিমালার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তার যথাযথ অনুসরণ হলো এই শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। একটি সংস্থার নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি, পদায়ন ইত্যাদি দাপ্তরিক কাজ এসব আইন ও বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সরকারী প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতা, পেশাদারিত্ব এবং বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি প্রদান করা হলেই কেবল শূন্য পদগুলোতে নতুনদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়।

    যেসব স্পর্শকাতর সংস্থা রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষার কাজে সরাসরি জড়িত সেসব সংস্থাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সচেতন জনগণ হিসেবে আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। যেসব গণমাধ্যম এসব অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত তাদের উদ্দেশ্য যে ভালো নয় তা বুদ্ধিমান পাঠকমাত্র অনুধাবন করতে পারবেন। বিশেষত সরকারী স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সংস্থাগুলোকে দুর্বল করে দেবার চক্রান্তের অংশ বলে অনুমান করা যায়। এখন পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি নাকি কোনো প্রতিবেশী দেশ এমন কর্মকাণ্ডে ইন্ধন জুগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এই দুটি গোষ্ঠী যে এসব কর্মকাণ্ডে লাভবান হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

    কালচারাল স্টাডিজে একটি অতি পরিচিত শব্দ হলো স্টেরিওটাইপিং। ধরুন কারো বাড়ি নোয়াখালী এটা শোনামাত্র যদি আপনার মনে হয় এই লোকটি খাওয়া শেষ হওয়ামাত্র দৌড় দিবে কিংবা কারো বাড়ি উত্তরবঙ্গে শুনে যদি আপনি ভাবেন লোকটি মফিজ তবে আপনি স্টেরিওটাইপিং-এর ফাঁদে পড়েছেন। স্টেরিওটাইপিং মানে একটি সাধারণ পূর্বনির্ধারিত ধারণার মধ্যে একটি শ্রেণিকে সংজ্ঞায়িত করা। এই বিষয়টি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করে।

    এখন একটি স্পর্শকাতর সরকারী সংস্থার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত অপেশাদার কর্মকাণ্ডকে পুঁজি করে এই সময়ে এসে পুরো প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিবাদী বলে চিত্রিত করা স্টেরিওটাইপিং-এরই একটি বহিঃপ্রকাশ যা একান্তই অনুচিত। আর সেই সংস্থা যদি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরাসরি জড়িত থাকে তবে এমন চিন্তা ও কথার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ও জাতি।

    ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ছাত্র-জনতার গৌরবোজ্জ্বল অভ্যুত্থানের পর সরকারী সকল সংস্থাতেই সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই সংস্কার কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো- জুলাই অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে পেশাদার, দক্ষ, বৈষম্যহীন, কার্যকর ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কিন্তু প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর এবং বিদেশী শক্তির আজ্ঞাবহ গণমাধ্যম এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

    এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই পুরোনো বাংলা প্রবাদ- চালুনি বলে ছুঁচ তোর পিছে কেন ছ্যাদা। জন্ডিস আক্রান্ত চোখ যেমন সবকিছুকে হলুদ দেখে তেমনি যারা ফ্যাসিস্ট তারা নিরপেক্ষ ও যোগ্য লোকদের অভিহিত করছে ফ্যাসিস্ট অভিধায়। আলেক্সান্ডার বেঁচে থাকলে হয়তো আবার বলতেন- সেলুকাস, বড় বিচিত্র এ দেশ!

    সর্বশেষ

    মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী...

    ঢাকায় শিগগিরই চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়

    ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত, শিগগিরই...

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশি

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশিঈদুল...

    প্রতিবেশীর গুলিতে অভিনেতা খুন

    হলিউড অভিনেতা জোনাথন জসকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।...

    আরও সংবাদ

    মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী...

    ঢাকায় শিগগিরই চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়

    ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত, শিগগিরই...

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশি

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশিঈদুল...