“উন্নতির পেছনে নেতিবাচক কারণও আছে। সেটা হচ্ছে, আমদানি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের কম, যার প্রধান কারণ বিনিয়োগ কমে যাওয়া,” বলেন বিশ্লেষক জাহিদ হোসেন।
রেমিটেন্সের প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার প্রভাবে বিদায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বিদেশি লেনদেনের ভারাসাম্য বা ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টে’ (বিওপি) উন্নতি ঘটেছে।
বিওপির যে হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে, তাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাওয়ার তথ্যও রয়েছে।
লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি এলেও আমদানি কমে যাওয়াকে অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রবণতা হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার, যা তার আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ছিল ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
সে হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৪৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। আর তার আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৪০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আমদানি হয় ৬৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। তার আগের অর্থবছরে হয় ৬৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
চলতি হিসাব
বাণিজ্য ঘাটতির মতো ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে চলতি হিসাবেও ঘাটতি কমেছে।
গত অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার; আর আগের অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন।
কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা মেটাতে ঋণ নিতে হয়।
আর্থিক হিসাব
আর্থিক হিসাবও উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত আর্থিক হিসাব দাঁড়িয়েছে উদ্বৃত্ত ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। আর আগের অর্থবছর একই সময় ছিল তা ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
আর্থিক হিসাব করা হয় প্রবাসী আয়, বিদেশি ঋণ ও সহায়তা, বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং পোর্টফলিও ইনভেস্টমেন্টের পরিসংখ্যান যোগ-বিয়োগ করে।
অন্যদিকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সার্বিক চিত্র উন্নতি হয়েছে। তবে সূচকগুলোর উন্নতির সঙ্গে রয়েছে কিছু নেতিবাচক দিক। আর বর্তমানে যে সব সূচক উন্নতি হয়েছে, সামনে নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “অবস্থা অনেকটা স্বস্তিদায়ক দেখা যাচ্ছে। চলতি ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে যে ঘটনা, সেখানে কিছু ইতিবাচক কারণ আছে; আবার নেতিবাচক কারণও আছে। ইতিবাচকের মধ্যে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল। তার চেয়ে বড় কারণ ছিল রেমিটেন্সের উল্লম্ফণ। এ কারণে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে।
“তবে এখানে নেতিবাচক হচ্ছে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের কম। এটার প্রধান কারণ হচ্ছে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। বিনিয়োগের স্থবিরতা তো অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য শুভ নয়।”
বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ সামনেও ধরে রাখতে হবে। নাহলে চাপের মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে ধরে যদি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন, তখন আমদানি বাড়বে। তখন চলতি হিসাবে আর উদ্বৃত্ত থাকবে না। সেটা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাপ তৈরি করতে পারে। সেই চাপটা মোকাবেলার জন্য যোগানে যে উন্নতি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, ”বৈদেশিক মুদ্রার যে উল্লম্ফন, তা কোনো নীতি নেওয়ার জন্য হয়নি। আসলে এটা হয়েছে সরকার পরিবর্তনের কারণে। কারণ যারা টাকা পাচার করতেন, তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। যে কারণ হুন্ডি বাজারে মন্দা এসেছে। তাতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বেড়েছে। আবার সামনে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তখন যেন পুরনো খেলা শুরু হয়ে না যায়।”