ভারতে ইদানীং প্রায়ই মুঘল সাম্রাজ্যকে ‘বিদেশি’ শক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়। নতুন ইতিহাস শেখাতে দেশটির কয়েকটি রাজ্যে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই সংশোধন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় ভারতীয় গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, পাঠ্যবই সংশোধনের মাধ্যমে ভারতের বহুত্ববাদী অতীতকে মুছে ফেলে একটি হিন্দুত্ববাদী বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান বিজেপি সরকার।
করোনা মহামারির সময় শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের বোঝা কমানোর কথা বলে পাঠ্যবই থেকে মুঘলদের ইতিহাসের ওপর লেখা অধ্যায়গুলো কাটছাঁট করা হয়। দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মুঘল দরবারের ৩০ পৃষ্ঠার পুরো অধ্যায় মুছে ফেলা হয়। মুঘলদের চিত্রিত করা হয় ‘শোষক ও বর্বর’ হিসেবে। মহীশুরের টিপু সুলতানকে আখ্যা দেওয়া হয় ‘হিন্দুদের গণহত্যাকারী’ হিসেবে।
এমনকি, ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান রাজস্থানের হলদিঘাটিতে হিন্দু রাজপুত মহারানা প্রতাপের সঙ্গে মানসিংহের নেতৃত্বে আকবরের সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে রাজপুতরা পরাজিত হলেও সেই রাজ্যের মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বলা হয়, যুদ্ধের ফলাফল ‘অমীমাংসিত’ ছিল।
মুঘলদেরকে শত্রু হিসেবে হাজির করা নতুন এই বয়ানের সঙ্গে একমত নন মার্কিন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রিচার্ড এম ইটন। ভারতের মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য খ্যাতিমান এই অধ্যাপকের মতে, মুঘলরা বিদেশি নয়, বরং পুরোপুরিভাবে ভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা এই দেশের মাটি-সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল।
সম্প্রতি ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’-কে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এই অভিমত ব্যক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। আধুনিক মানদণ্ডে মুঘলদের বিদেশি হিসেবে বিচার করা ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে মনে করেন তিনি।
জেড নিউজ, ঢাকা।