“আমি এখনো আশাবাদী, আমাদের ইনফ্লেশন কমে আসবে। আমরা হয়তো পাঁচের নিচে চলে যেতে পারব এই অর্থবছর শেষে।”
দেশে টানা চার মাস মূল্যস্ফীতি কমার পর ফের বাড়াকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে দেখছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তার ভাষ্য, “ইনফ্লেশন কিছু কমেছে। আরও অনেক কমাতে হবে। কিন্তু প্রতি মাসেই যে কমবে এই ধারণা করাটাও আবার ভুল হয়।
“দুই মাস-তিন মাস কমবে, আবার এক মাস বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।”
তবে অর্থবছর শেষে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন নিয়ে এক সংলাপে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে কালক্ষেপণের কিছু নাই। আমি এখনো আশাবাদী, আমাদের ইনফ্লেশন কমে আসবে। আমরা হয়তো পাঁচের নিচে চলে যেতে পারব এই অর্থবছর শেষে।
“এটা আমাদের প্রত্যাশা এবং এটা আমাদের হবে বলে আমি আশাবাদী।”
জুন মাসে কিছুটা কমার পর জুলাই মাসে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
অর্থবছরের প্রথম মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে, জুন মাসে যা ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ ছিল।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের উচ্চ হার ধরে রেখেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন অনুষ্ঠানে বলেন, “উন্নতি দেখতে পেয়েছি মূল্যস্ফীতিতে। যেটা দেখেছি ১০ বা তার বেশি, এখন তা কমছে। কমার হার কম, তবে কমছে।“
একবছর কম সময় হলেও এর মধ্যে জীবন ও জীবিকায় ‘স্বস্তি’ না আসার সমালোচনা করেন তিনি। এর সমাধান হিসেবে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ চালু রাখার পরামর্শ দেন।
ফাহমিদা বলেন, “মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চ, বিনিয়োগ আসছে না। কর্মস্থান হচ্ছে না। সর্বেপরি রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না।
“যেহেতু উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, তাই তাদের জন্য যেসব কর্মসূচি রয়েছে তা চলমান রাখতে হবে।“
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডলারের বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে সাফল্য এবং আমদানি ও রপ্তানি বাড়ার তথ্য দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘জোড়ালো অবস্থানের কারণে’ রেমিটেন্স বাড়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
তবে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মীদের আন্দোলনের সমালোচনা করেন।
তার ভাষ্য, “যে জিনিসটা আমাদের খেয়াল করতে হবে, সেটা হচ্ছে, গভার্নমেন্টের যে সমস্যা, অর্থাৎ রেভিনিউ শর্টফল (রাজস্ব ঘাটতি) এবং সেটার ফলে যে বড় রিকয়ারমেন্ট, সেটাকে তো আমরা… করতে পারি নাই।
“এখানে যে জিনিসটা হয়ে যাচ্ছে যে রিফর্ম যদি শুরুও করা হয় আজকে, রেজাল্ট আসবে তিন বছর পর। আমি সবসময় বলি এই জায়গাটায় রিফর্ম দরকার।
“বহু আন্দোলন দেখবেন এনবিআর নিয়ে। কত রকমের ঝামেলা… এটা তো বিশাল ঝামেলা। যাই হোক, আমি সরকারকে সাধুবাদ অবশ্যই দেব যে দৃঢ় অবস্থানে ছিল।”
সংস্কারে বাধা প্রসঙ্গে এনবিআরের মধ্যে ‘গৃহ শত্রু’র কথা বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “এখনই দ্রুততার সাথে এই রিফর্মগুলো (এনবিআরের) বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ যে প্রতিপক্ষটা ছিল ভিতরের, যেটা ‘গৃহ শত্রু’, সেটাকে কিন্তু এখন অনেকখানি দমন করা সম্ভব হয়েছে।
“তাদেরকে রেখে এটা করা সম্ভব ছিল না। রেজিস্ট্যান্স ফ্রম উইদিন এনবিআর, হিউজ অ্যান্ড ভেরি স্ট্রং। ভেরি স্ট্রং। কানেক্টিভিটি টু হোল পলিটিক্যাল অ্যাফিলিয়েশন। এ বিষয়ে আমাদেরকে বুঝতে হবে।
“তো সেখানে এখন একটা ভালো অবস্থানে আছে। এখনই রিফর্মটাকে হ্যামার করতে হবে। তা না হলে সুযোগ আবার হারিয়ে যেতে হবে।”
গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কারের কথাও তুলে ধরেন।
ব্যাংক খাত সম্পৃক্ত নানা ধরনের আইন সংশোধনের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন সংশোধনীতে স্পন্সর পরিচালক কমিয়ে স্বাধীন পরিচালক ৫০ শতাংশ করা হবে।
তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীন রাখা এবং এর নেতৃত্বকে আমলাতন্ত্রের বাইরে রাখার কথাও বলেন তিনি।