২১ জুলাই, ২০২৫। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পরপর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সেই কঠিন সময়ে একজন শিক্ষক রয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের পাশে। তিনি মাহরীন চৌধুরী। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক, যিনি দায়িত্বের জায়গা থেকে সরেননি।
মাহরীন চৌধুরীর শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন তিনি। মাহরীন চৌধুরী মাইলস্টোন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। ভবনে আগুন লাগার সময় তিনি সবার আগে নিজে বের হননি, বরং যতজন ছাত্রছাত্রীকে পারা যায়, বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে তাঁর শরীরের ১০০ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়। তিনি রেখে গেছেন তাঁর দুই ছেলে।
মাহরীন চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক পোস্ট চোখে পড়ছে। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ‘বীর’হিসেবে বর্ণনা করে লিখছে, এই গভীর শোকে আমরা স্তব্ধ। তবু এ সময়ে মাহরীন ম্যাডামের মতো ‘বীর’ শিক্ষকদের কথা পড়ে, জেনে, শুনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় নত হই। আমাদের চোখ ভিজে আসে। আমরা সাহসে বুক বাঁধি।
আসলেই তিনি জাতীয় বীর; কারণ তার দেহে ছিলো বীরের রক্ত। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। রাজনৈতিক পরিচয় কখনো দিতেন না। বাইরের মানুষ তাকে চিনতেন তিনি মাইলস্টোন কলেজের কো-অর্ডিনেটর। কিন্তু তার আড়ালে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদরের ভাতিজি। জিয়াউর রহমানের মামাতো ভাই মহিদুর রহমান চৌধুরীর মেয়ে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুর পর তার পরিবার আগলে রাখেন এই মহিদুর রহমান।
মিডিয়া ফোকাসের জন্য আজ অনেকেই অনেক কিছু করেন, কিন্তু এই পরিবার কিংবা শিক্ষক মাহরিন চৌধুরী কখনোই কোনো প্রচারে আসতেন না। জীবনের শেষ সময়েও তিনি ছিলেন নিজ দায়িত্বে অবিচল। নিজের জীবনের চিন্তা না করে, সন্তানের মতো আগলে রাখা শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন শেষ মুহুর্ত পযন্ত। একে একে ২০ জন শিশুকে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বের করে আনতে পারলেও, নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। শেষ পযন্ত নিজের জীবন দিয়ে রেখে গেলেন তার মহত্ত্বের পরিচয়।
জেড নিউজ, ঢাকা।