জেড নিউজ, ঢাকা:
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ এখন বাস্তবায়নের পথে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি অঞ্চলকে একটি আধুনিক, রপ্তানিমুখী, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এই অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে মাতারবাড়িকে দেশের বৃহত্তম বন্দর, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ( লজিস্টিকস), উৎপাদন ও জ্বালানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তব রূপ নিতে চলেছে।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হাউস যমুনায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে “মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ” (এমআইডিআই)-এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এটি বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ উদ্যোগ, যার লক্ষ্য মাতারবাড়ি অঞ্চলকে একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক করিডরে রূপান্তর করা। এই বৈঠকে জানানো হয় যে মাতারবাড়িকে দেশের সঙ্গে যুক্ত করতে নতুন সড়ক নির্মাণ, গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা, পরিকল্পিত শহর নির্মাণ, এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ—এই চারটি দিককেই গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্প শুধু দেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে না, বরং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে রূপান্তর করবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা মাতারবাড়িকে দেশের বৃহত্তম বন্দর, লজিস্টিকস, উৎপাদন ও জ্বালানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।” তিনি মাস্টার প্ল্যান তৈরির ওপর জোর দেন এবং সংশ্লিষ্ট সচিবদের দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়নের নির্দেশ দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, এবং সড়ক, নৌপরিবহন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ। এমআইডিআই সেলের মহাপরিচালক সরওয়ার আলম চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি উপস্থাপন করেন। জাপান মাতারবাড়িতে তাদের দ্বিতীয় একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এবং এর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রথম অঞ্চলটি ইতিমধ্যেই সফলভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
এদিকে সৌদী আরবের আরামকো, আবুধাবি পোর্টস, রেড সি গেটওয়ে, জাপানের জেরা এবং মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জাপানি কোম্পানি পেন্টা-ওশান ও টোয়া কর্পোরেশনের সঙ্গে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে, যা জাইকার সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামী ২৮ মে প্রফেসর ইউনূস জাপানে সরকারি সফরে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন।
মাতারবাড়িকে ঘিরে সরকারের এই শুধুমাত্র একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, বরং এটি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জাপানের সঙ্গে দৃঢ় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে এই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের হাবে পরিণত হলে, দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের নতুন দ্বার খুলে যাবে।