ব্রিটিশ আমলে অঙ্কিত ভারতবর্ষের বেশ কিছু চিত্রকর্ম সম্প্রতি ফেসবুকে বেশ দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে খোঁজ পেলাম ফিলিপ থর্ন্টন নামের এক ব্রিটিশ নাগরিকের। তিনি ব্রিটিশ ভারত, নেপাল, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু ফটোগ্রাফ ও চিত্রকর্ম একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করেন। গ্রুপটির নাম ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অ্যান্ড রাজ রিসার্চ গ্রুপ ১৬০০-১৯১৯’।
সেখানে শত শত ছবির মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কিত চিত্রকর্মও রয়েছে, যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট প্রভৃতি। আজকের লেখায় থাকছে বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামের কয়েকটি চিত্র। চট্টগ্রামের প্রাচীন চিত্রগুলোর প্রায় সবই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কার এবং সেগুলোর বেশিরভাগই ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে আঁকা।
সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সিভিল প্রশাসনের কর্মরত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের আঁকা চিত্রও পাওয়া যায়। আজকের এ লেখায় তুলে ধরা হবে চট্টগ্রামের সাতটি চিত্র, যেগুলো এঁকেছেন ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জেমস ক্রকেট, কর্নেল জেমস জর্জ এবং থমাস প্রিন্সেপ। সে আমলের চট্টগ্রামের কিছু দৃষ্টিনন্দন চিত্র এবং ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কেমন, তা-ই জেনে নেওয়া যাক।
পাহাড়টি বর্তমানে আন্দরকিল্লায় অবস্থির ‘জেনারেল হসপিটাল পাহাড়’ নামে পরিচিত।
বাড়িটির অবস্থান ছিল ‘রংমহল’ নামের এক পাহাড়ের ওপর। দৈনিক আজাদীতে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনবিদ ও লেখক জিয়া হাবীব আহসানের লেখায় জানা যায়, আরাকানি যুগ থেকেই রংমহল পাহাড়ের খ্যাতি ছিল। এটি আরাকানি দুর্গের অংশ ছিল, যা ১৬৬৬ সালে মোগল নৌবাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয়।
জেমন ক্রকেটের আনুমানিক ১৮০১ সালের এ ছবিতেও চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক একটি বাড়ি দেখা যায়। ছবিতে ডাক্তার উইলসনের ক্লারমন্ট বাড়ির পাশের দৃশ্য এবং কর্নেল এলারকারের বাংলো দেখা যায় বলে দাবি করেছেন ‘অতীত চিত্রে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থের লেখক। তবে ফিলিপ থর্ন্টনের মতে, এ অভিজাত জমিদার বাড়িটি জর্জ ডটসওয়েল নামক একজন ব্রিটিশের।
ছবিটিতে বাড়ির পেছনে নদী এবং দূরবর্তী পাহাড়ের উপস্থিতি লক্ষণীয়। ১৮১৮ সালে ক্যাপ্টেন জন চিপের আঁকা চট্টগ্রামের মানচিত্র অনুযায়ী, ডাক্তার রবার্ট উইলসনের বাড়িটি শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে কর্ণফুলী নদীর তীরে ছিল। শেখ শওকত কামালের তথ্য অনুযায়ী, বাড়িটির স্থান বর্তমান পাথরঘাটা এলাকার ইকবাল রোড ও বংশাল রোডের মাঝামাঝি বলে অনুমান করা হয়।
পাথরঘাটা ওয়ার্ডটি শহরের দক্ষিণপূর্ব কোণে অবস্থিত। এর এক পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদী বয়ে গেছে। পর্তুগিজ আমল থেকে এই অঞ্চলে খ্রিস্টান অধিবাসীদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করছেন। একসময় এখানে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারের সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য। ষাটের দশকে তাদের অনেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় চলে যান। ফলে ছবির চিত্রটিকে বর্তমান পাথরঘাটার সঙ্গে যুক্ত করলে ভুল হবে না।
বর্তমান পাথরঘাটার ইকবাল রোড ও পাথরঘাটা রোডের মাঝামাঝি স্থানে গেলে মোড়ের দৃশ্যটি সহজেই চোখে পড়ে। এই অঞ্চলটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত। মোড়ে যে বড় দেয়াল দিয়ে ঘেরা বাউন্ডারি দেখা যায়, সেটি চট্টগ্রামের ক্যাথিড্রাল অব আওয়ার লেডি অফ দ্য হোলি রোজারি চার্চ, যা স্থানীয়ভাবে বান্ডেল ক্যাথলিক চার্চ বা পাথরঘাটা গির্জা নামে পরিচিত।