Thursday, May 29, 2025
More
    Homeঅর্থনীতিবন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের কাছে ‘হস্তান্তর ঠিক না’: মির্জ্জা আজিজ

    বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের কাছে ‘হস্তান্তর ঠিক না’: মির্জ্জা আজিজ

    রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তৈরি হওয়া মতপার্থক্যের কারণে বাজেট প্রণয়ন ‘বেশ কঠিন’ বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে দুই অর্থবছরে বাজেট দেওয়া এই অর্থনীতিবিদ।

    চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় খুব একটা ‘অভিযোগ’ না থাকার কথা তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ’অর্থপাচারের’ কিছু ঘটনা থাকলেও এটির টার্মিনাল পরিচালনার কাজ বিদেশিদের কাছে ‘হস্তান্তর করাটা ঠিক না’।

    ‘আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের’ মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধ করতে কাস্টমস ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও সক্রিয় করার পরামর্শ দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। বলেন, “তো সেটার জন্য (অর্থপাচার বন্ধ) কোনো বিদেশি ফার্মের দরকার আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।

    “আমাদের দুদক আছে, আমাদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আছে। তাদেরকে যদি আমরা সক্রিয় করতে পারি এবং তাদেরকে যদি আইনানুগ সমর্থন দিতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় যে বিদেশি কোম্পানির হাতে এটা হস্তান্তর করাটা সঠিক না।”

    বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউট’ এ অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে এমন মতামত তুলে ধরেন মির্জ্জা আজিজ।

    বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে; তেমনি নির্বাচন কখন হবে তা নিয়েও টানাপোড়েন চলছে। মিয়ানমারে ত্রাণ পাঠাতে মানবিক করিডোর বিষয়েও দলগুলোর অবস্থান সরকারের বিপরীতে।

    পটপরিবর্তনের পর এখন যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, সেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বাজেট প্রণয়ন করা ‘বেশ কঠিন’ বলে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ২০০৭-০৮ মেয়াদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে দুটি বাজেট দেওয়া মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

    বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের কাছে ‘হস্তান্তর ঠিক না’: মির্জ্জা আজিজ

    তিনি বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের মধ্যে ‘মতপার্থক্য’ না থাকায় মানুষের মধ্যে ‘স্বস্তির পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল’। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন দল ভিন্ন ভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করছে, যা আবার ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ না’- যা বাজেটের কাজকে কঠিন করে তুলেছে।

    রাজনৈতিক দলগুলো ‘বিভিন্ন মত’ প্রকাশ করতে থাকায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ‘অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি’ হয়েছে বলেও তার মূল্যায়ন।

    তার ভাষ্যে, “এই অনিশ্চিত পরিবেশে তো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ে না। তো কাজেই আমাদেরকে চেষ্টা করতে লাগবে যে- এই অনিশ্চয়তাটা কীভাবে দূর করা যায়।”

    ইনসাইড আউট’ এর এই আলোচনা অনুষ্ঠানে সাবেক আমলা ও অর্থনীতির শিক্ষক মির্জ্জা আজিজ বাজেট, বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বেকারত্ব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, পাচারের টাকা ফেরানো, আর্থিক পরিস্থিতি, এনবিআর বিলুপ্তি, বন্দর ব্যবস্থাপনার মত বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।

    রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।

    সেনা সমর্থিত ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দুটি জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন সেই সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজ। প্রায় দেড় যুগ বাদে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ফিরলেও দুই সময়ের পরিস্থিতি যে ভিন্ন তা মানছেন অর্থনীতির এই শিক্ষক।

    তার কথায়, “যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ করেছে, সেই সময় কিন্তু খুব একটা মতপার্থক্য ছিল না। দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তির পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল বলে আমি মনে করি।

    “তো বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করছেন এবং সেই দাবি দেওয়াগুলো সবগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ না। এতে করে বাজেট প্রণয়ন করাটা বেশ কঠিন ব্যাপার।”

    অনিশ্চিত পরিবেশে দারিদ্র্য বিমোচনে ‘হোঁচটের’ শঙ্কা

    অভ্যুত্থানের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট দিতে যাওয়ার আগের এমন পরিস্থিতিতে বাজেট প্রণয়নের উপায় বাতলাতে গিয়ে মির্জ্জা আজিজ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজস্ব আহরণ, ব্যয়ের মাত্রা নির্ধারণ ও ঘাটতি বাজেট তৈরিতে অভ্যন্তরীণ বা বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখার কথা বলেন।

    একই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান সমস্যা বিশেষ করে জিডিপির অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার দিকে নজর দেওয়ার পরার্মশ দেন।

    এ অবস্থায় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি ‘হোঁচট’ খেতে পারে বলে শঙ্কা তার।

    তিনি বলেন, “এখন সবাই বলছে এটা ৫ শতাংশের এর নিচে থাকবে। তো এখন জাতীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি যদি কম হয়, তাহলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। কর্মসংস্থান না হলে দারিদ্র বিমোচনে আমরা হোঁচট খাব।”

    গরীব মানুষের কষ্ট বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি

    দেশে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা চলছে, তাতে দরিদ্র মানুষের জীবনমান তলানিতে ঠেকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আর মূল্যস্ফীতির ফলে যে ব্যাংক খাতকেও ভুগতে হয়, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মির্জ্জা আজিজ।

    তিনি বলেন, “অর্থনীতিটার বড় সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। সম্প্রতি সামান্য একটু কমেছে, কিন্তু এখনো ৯ শতাংশের উপরে আছে মূল্যস্ফীতি। এখন মূল্যস্ফীতি বেশি হলে আপনার অনেকগুলো সমস্যা সৃষ্টি হয়; একটা হচ্ছে যে- লোকে ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হয় না।

    “কেননা ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে যে সুদ পাবে সঞ্চয়কারীরা, মূল্যস্ফীতি তো প্রায় তার বেশি। তো কাজেই প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনি আপনার মূলধন হারাচ্ছেন। কাজেই ব্যাংকিং খাতে এতে করে সমস্যা সৃষ্টি হবে।

    “তারপরে অতিমাত্রায় মূল্যস্ফীতি হলে দারিদ্র্য সীমার নিচে যে লোকের সংখ্যা, সেটা আরো বেড়ে যায়। কেননা তাদের তো সঞ্চয় থাকে না। যারা অপেক্ষাকৃত উচ্চবিত্ত মানুষ, তারা হয়ত মূল্যস্ফীতির সময় তাদের সঞ্চয় ভেঙে তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারে। কিন্তু গরিব মানুষ যারা, তাদের তো সঞ্চয় থাকে না। সুতরাং, তাদের তো এই সুযোগও থাকে না।”

    বেকার বাড়ছে, সরকারের করণীয় কী?

    উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতির বহুমাত্রিক চাপের মধ্যেই বেকার বাড়ার তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সবশেষ হিসাবে, ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ লাখ, যেখানে আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল সাড়ে ২৫ লাখ। গত বছর বেকারের হার ছিল ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ; যেখানে ২০২৩ সালে বেকারের হার ছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।

    বেকারত্বের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার রাশ টানার তাগিদ দিয়ে অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজ বলেন, “তো এখানে যেটা করতে লাগবে, সেটা হচ্ছে যে আপনার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে হবে। একদিকে আমরা সংকোচনমূলক বাজারের কথা বলি, যেহেতু রাজস্ব আহরণে আমাদের ঘাটতি থাকছে। তবে এর সাথে সাথে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ যাতে বাড়ানো হয়, সেদিকটা আমার মনে হয় দৃষ্টি দেওয়া লাগবে।

    “তবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের যে অতীতের অভিজ্ঞতা, সেটা কিন্তু খুব সুখকর নয়। এর কারণ হলো যে- দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই যাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসার কথা না, তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে। যাদের আসার কথা, তারা অনেকেই বাদ পড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর যে বিভিন্ন প্রকল্প আছে, সেগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বা অন্য সম্পদ সেগুলো তছরুপ হয়।”

    এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার তাগিদ দিয়ে তিনি এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

    সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের শেষভাগে এসেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসেনি; এপ্রিল পর্যন্ত সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় হয়েছে ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

    মির্জ্জা আজিজ বলেন, “অনেক সময় কাজ না করে পেমেন্ট করা হয় বরাদ্দ হয়েছে দেখানোর জন্য। মানে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহার হয়েছে দেখানোর জন্য বা কাজের মান ঠিক থাকে না ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা হয়।”

    আর বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জ্বালানিসহ যেসব সংকট রয়েছে, সেই সব সংকট কাটানোর তাগিদ দিয়েছেন সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা।

    ‘স্বস্তির পরিস্থিতি’ নেই, রাজনৈতিক মতপার্থক্যে বাজেট প্রণয়ন কঠিন: মির্জ্জা আজিজ

    তিনি বলেন, “বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য যে সমস্যা, সেগুলো আমরা সবাই জানি। একটা তো বড় সমস্যা হচ্ছে যে- এনার্জি গ্যাসের অপ্রতুলতা। বিশেষ করে তার ফলে ফ্যাক্টরি চালু রাখতে পারছেন না অনেকেই। এবং অনেক ক্ষেত্রে গ্যাসটা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেমন সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি। তো এখন এই বিনিয়োগ যাতে বাড়ানো যায়, সেজন্য এনার্জি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা লাগবে।”

    এখন বিনিয়োগের সম্ভাবনা কতটা?

    বেসরকারি বিনিয়োগে জ্বালানি সংকট দীর্ঘ মেয়াদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার সঙ্গে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা যোগ হওয়ায় বিনিয়োগের তেমন আশা দেখছেন না অর্থনীতির এই শিক্ষক।

    তার ভাষ্যে, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি খুব বেশি আশাবাদ পোষণ করি না। তার কারণ হচ্ছে যে, এই যে এনার্জি ছাড়াও সার্বিকভাবে রাজনৈতিক মহলের স্থিতিশীলতা, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বিভিন্ন দল বিভিন্ন রকমের মত প্রকাশ করছেন; সেটা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাতে করে একটা অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

    “এই অনিশ্চিত পরিবেশে তো বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ে না। তো কাজেই আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে যে, এই অনিশ্চয়তাটা কীভাবে দূর করা যায়। এবং অর্থনীতির কতগুলো মূল ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যাতে একমত পোষণ করে, সেটার জন্য চেষ্টা করা লাগবে।”

    আর্থিক খাতে দুর্দশা কাটছে কী?

    আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে লুটপাটের কারণে অর্থনীতি খাদে পড়ে- এমনটাই বলে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই দশা কাটার লক্ষণ কতটা দেখা যাচ্ছে, সেই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজ। তবে সংকট সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

    তার কথায়, “সত্যি কথা বলতে যে, ব্যাংক খাতের যে মূল সমস্যা হচ্ছে ডিফল্ট লোন বা অনাদায়ি ঋণ। তো তাতে করে ব্যাংকগুলোর পক্ষে নতুন ঋণ দেওয়া বেশ দুঃসাধ্য।

    “কেননা তাদের তো ক্যাপিটাল ফ্লো মেইনটেইন করা লাগে এবং ডিপোজিট অ্যাডভান্স রেশিও মেইনটেইন করা লাগে। তো অনাদায়ি ঋণের মাত্রা বেড়ে গেলে এইসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হয়।”

    এই অবস্থার মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক একীভূত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার, সেটি ‘কঠিন ব্যাপার’ বলে মনে করেন এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

    পুঁজিবাজারে বর্তমানে যে আস্থার সংকট চলছে, সেই প্রসঙ্গে মির্জ্জা আজিজ বলেন, “পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বেশ কতদিন ধরেই গতি নিম্নমুখী। হয়তো একদিন-দুইদিন কিছুটা বাড়ে সূচক, আবার ওটা ফল করে।”

    পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির একসময়ের এ চেয়ারম্যান মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে দেশি-বিদেশি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

    এ পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বলেন, “পুঁজিবাজারে আমি সবচেয়ে বড় সমস্যা এটাই মনে করি যে- বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব এবং এর পেছনে একটা তো হল যে- কিছু কিছু পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট যারা কর্মকর্তা আছে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনে, তাদের কিছু দুর্নীতির অভিযোগ আছে।

    “সেগুলো বিশ্লেষণ করে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; এটা একটা দিক। আর এর চাইতে বড় কথা হচ্ছে যে- নতুন ভালো কোম্পানি দেশি হোক, বিদেশি হোক এবং প্রয়োজনে আপনার প্রিমিয়াম দিয়েও অন্তর্ভুক্ত করা।”

    পাচারের অর্থ ফেরানো ‘সহজ না’

    গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন বাদে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা হয়। এই সরকার বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক লুটপাট করে সেই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

    অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করে যারা চলে গেছেন, তাদের সম্পদ জব্দ করে একটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, এই তহবিল ব্যবহার করা হবে জনহিতকর কাজে।

    এ উদ্যোগ কতটা বাস্তবসম্মত- এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জ্জা আজিজ বলেন, “এটা খুব কঠিন ব্যাপার। আমরা যতই বলি না কেন উচ্চস্বরে যে, ফেরত আনা হবে; কিন্তু আমি মনে করি এটা সহজসাধ্য ব্যাপার না।।

    “এটা খুব কঠিন। তার কারণ হচ্ছে ধরুন যে, কেউ যদি সেখান থেকে টাকা লুট করে বিদেশের কোনো ব্যাংকে পাঠায়, সেখানে তো তালা দিয়ে কোনো সিন্দুকের মধ্যে রাখছে না। তারা কোনো ব্যাংকে জমা দিচ্ছে। যেমন সিঙ্গাপুরে হোক বা হংকং হোক বা অন্য দেশে হোক।

    “এখন সেখান থেকে টাকা আনতে গেলে আপনাকে ওই দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া লাগবে। সেখানে কোর্ট অর্ডার না পেলে তো কেউ টাকা ফেরত দেবে না এবং এটা বেশ কঠিন।”

    এর আগে ফিলিপিন্স এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে ভালো ফল পায়নি বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।

    তিনি বলেন, “আমরা ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট (ফার্দিনান্দ) মার্কোসের আমলে এরকম অনেক টাকা পাচার হয়েছিল বলা হয়েছিল। তারপরে সেগুলো ফেরত আনার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। খুব সামান্য কিছুই ফেরত এসেছিল আমার জানামতে।”

    আর দেশের জব্দ সম্পদ দিয়ে জনকল্যাণে ব্যয়ও ‘খুব সহজ নয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    বন্দরে বিদেশি কোম্পানির ‘প্রয়োজন নেই’

    অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানি যুক্ত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি, বামপন্থিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

    মির্জ্জা আজিজের ভাষ্য, “আমার কাছে তো যেটা মনে হয় যে বন্দর ব্যবস্থাপনায় একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস আছে এবং আমাদের দেশের থেকে তো আমদানি-রপ্তানি দুটোই হচ্ছে এতদিন ধরে। বেশ অনেকদিন ধরে। এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে মোটামুটি অগ্রগতি হয়েছে।

    “সেখানে তো পোর্ট হ্যান্ডলিংয়ে খুব একটা অভিযোগ আছে বলে মনে হয় না। হ্যাঁ, তবে কিছু কিছু হয় যেটা আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং হয়; যেটা করে আবার ওই অর্থপাচার করা হয়।”

    এ সংকট উত্তরণে কাস্টমস ও দুদক যাতে বন্দরে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

    ভারতের নিষেধাজ্ঞায় রপ্তানি ‘বাধাগ্রস্ত হবে’

    স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ অন্তত সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে গত ১৭ মে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। প্রতিবেশী দেশটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা (জওহরলাল নেহরু) সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।

    ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজ বলেন, “এটা তো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তার কারণ হচ্ছে যে- এতে আমাদের পরিবহন খরচ পড়ে (বেড়ে) যায়। ভারতে আমাদের কিন্তু বেশ কিছু রপ্তানি হয়। আমদানি তো হয়, রপ্তানিও বেশ কিছু হয়। এখন এতে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।”

    এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে খরচ বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। বলেন, “ভারত থেকে পণ্য আমদানি না করলে তো সমস্যা হবে। কেননা যদি অল্টারনেটিভ সোর্স, যদি আমরা চীন থেকে আনতে চাই বা অন্য জায়গা থেকে আনতে চাই, তাতে তো খরচের মাত্রা আরো বাড়বে।

    ভারত যাতে এটি তুলে নেয় সেজন্য দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন তিনি।

    হঠাৎ এনবিআর ভাগের সিদ্ধান্ত ‘ভালো হবে না’

    আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করেছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে কর্মকর্তারা আন্দোলনে নামায় রাজস্ব আহরণ কমার শঙ্কা করছেন মির্জ্জা আজিজ।

    তিনি বলেন, হঠাৎ করে এনবিআর ভাগের সিদ্ধান্ত নিলে হবে না।

    “এটা অনেক দেশেই আছে যেটা এবং এটা ইন প্রিন্সিপল সমর্থনযোগ্য। কিন্তু কথা হচ্ছে- এটাও আমি মনে করি, এই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে বা এই অর্ডিন্যান্স জারি করার আগে এনবিআরের বর্তমান যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে, তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের করা উচিত ছিল।”

    বাজেট সংকোচনমূলক করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাতে যাতে হাত না দেওয়া হয়, সেই পরামর্শও দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা।

    তিনি বলেন, “আমাদের দেশের সংকোচনমূলক বাজেটের মধ্যেও বিভিন্ন খাতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর দরকার আছে।

    “কাজেই সংকোচনমূলক বাজেট করতে গিয়ে যে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়ের মাত্রা যাতে না কমে, সেটা নিশ্চিত করা লাগবে। তার মধ্যে যেমন আমরা সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলেছি। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, তারপরে অবকাঠামো খাত। এইসব জায়গায় যাতে বরাদ্দের মাত্রা না কমে, সেটা নিশ্চিত করা লাগবে।”

    সর্বশেষ

    যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন:...

    জেড নিউজ, ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে যে...

    সব মামলায় খালাস তারেক রহমান

    জেড নিউজ, ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান...

    সালমানকে খারাপ অভিনেতা বললেন কারিনা!

    সিকান্দার’ সিনেমার ভরাডুবির পর সালমান খানের স্টারডম নিয়ে প্রশ্ন...

    রিপনের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে শাস্তির মুখে এনতুলি

    চার দিনের টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে আজ মিরপুর শেরে...

    আরও সংবাদ

    যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন:...

    জেড নিউজ, ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে যে...

    সব মামলায় খালাস তারেক রহমান

    জেড নিউজ, ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান...

    সালমানকে খারাপ অভিনেতা বললেন কারিনা!

    সিকান্দার’ সিনেমার ভরাডুবির পর সালমান খানের স্টারডম নিয়ে প্রশ্ন...