Sunday, June 8, 2025
More
    Homeঅন্যান্যদ্বীপের সঙ্গে সংঘর্ষের পথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ, ফলাফল কী হতে পারে

    দ্বীপের সঙ্গে সংঘর্ষের পথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ, ফলাফল কী হতে পারে

    পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আইসবার্গটি (হিমশৈল) ক্রমে যুক্তরাজ্যের দুর্গম এক দ্বীপাঞ্চলের কাছাকাছি যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দ্বীপের সঙ্গে এটির সংঘর্ষ ঘটবে এবং এর কারণে এ অঞ্চলে বিচরণকারী পেঙ্গুইন ও সিলের মতো প্রাণীগুলো ঝুঁকিতে পড়বে।

    হিমশৈলটি ক্রমাগত অ্যান্টার্কটিকা থেকে উত্তরে যুক্তরাজ্যের দুর্গম অঞ্চল সাউথ জর্জিয়ার দিকে এগোচ্ছে। এ অঞ্চল বন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবেও পরিচিত। হিমশৈল এখন সাউথ জর্জিয়া থেকে ১৭৩ মাইল (২৮০ কিমি) দূরে অবস্থান করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দ্বীপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হিমশৈলটি টুকরা টুকরা হয়ে যেতে পারে।

    অতীতে বড় হিমশৈল এসে ধাক্কা খাওয়ার কারণে সাউথ জর্জিয়ার বরফাচ্ছাদিত সাগরতীর ও খাঁড়িতে বিচরণকারী অগণিত পাখি ও সিল মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। খাবার সংগ্রহের পথ রুদ্ধ হয়ে এদের মারা যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

    সমুদ্রবিষয়ক গবেষক মার্ক বেলচিয়ার বলেন, সাউথ জর্জিয়া আইসবার্গ অ্যালিতে অবস্থিত। তাই মৎস্য ও বন্য প্রাণী—উভয়ের ওপরই এর (দ্বীপের সঙ্গে হিমশৈলটির সংঘর্ষের) প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে এবং উভয়েরই পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে।

    সাউথ জর্জিয়া সরকার পরিচালিত ফারস জাহাজের ক্যাপ্টেন সাইমন ওয়ালেস বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘হিমশৈলগুলো সহজাতভাবেই বিপজ্জনক। যদি এটা একেবারেই না থাকত, তাহলে আমি অত্যন্ত খুশি হতাম।’

    বিশ্বের বিজ্ঞানী, নাবিক ও জেলেদের দল ওই হিমশৈলের দৈনন্দিন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিগুলো যাচাই করার মধ্য দিয়ে এর দিকে নজর রাখছে তারা।

    বিশালাকারের হিমশৈলটি এ২৩এ নামে পরিচিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো হিমশৈলগুলোরও একটি। ১৯৮৬ সালে হিমশৈলটি অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার আইসশেলফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সমুদ্রতলে আটকে পড়ে। পরে আবার একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিতে আটকে পড়ে এটি। শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বরে হিমশৈলটি সামুদ্রিক ঘূর্ণি থেকে মুক্ত হয় এবং সাউথ জর্জিয়ার দিকে এগোতে থাকে।

    অ্যান্টার্কটিকার উত্তর দিকের উষ্ণ জলরাশি হিমশৈলটির উঁচু চূড়াগুলো দুর্বল করছে এবং গলিয়ে দিচ্ছে। এগুলো ১ হাজার ৩১২ ফুট (৪০০ মিটার) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে; যে উচ্চতা যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উঁচু ভবন দ্য শার্ডের চেয়ে বেশি।

    একসময় হিমশৈলটির আকার ছিল ৩ হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটার। স্যাটেলাইটে ধারণ করা সাম্প্রতিক সময়ের ছবিতে দেখা গেছে, এটি ধীরেই ক্ষয় হচ্ছে। বর্তমানে এর আকার কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটারে, যা ইংল্যান্ডের কর্নওয়াল কাউন্টির সমান।

    ইতিমধ্যে হিমশৈলটির কিনার থেকে বড় বড় বরফখণ্ড ভেঙে পানিতে পড়া শুরু করেছে। যেকোনো দিন পুরো হিমশৈল বড় বড় খণ্ডে টুকরা হয়ে যেতে পারে। এতে সাউথ জর্জিয়ার চারপাশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভেসে বেড়ানো বরফের শহরগুলোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

    বড় হিমশৈলের কারণে সাউথ জর্জিয়া ও স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জ হুমকিতে পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়; ২০০৪ সালে এ৩৮ নামের একটি হিমশৈল দ্বীপের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কারণেও এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। বিশাল বরফের টুকরার কারণে খাবার সংগ্রহের পথ বন্ধ হয়ে সমুদ্রতীরের অনেক পেঙ্গুইন ও সিলের ছানা মারা যায়।

    অঞ্চলটি কিং এমপেরর পেঙ্গুইনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আবাসস্থল। বহু হাতি ও পশমযুক্ত সিলের আবাসও এখানে।

    সমুদ্রবিষয়ক গবেষক মার্ক বেলচিয়ার সাউথ জর্জিয়া সরকারকে বুদ্ধি–পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, সাউথ জর্জিয়া আইসবার্গ অ্যালিতে অবস্থিত। তাই মৎস্য ও বন্য প্রাণী—উভয়ের ওপরই এর (হিমশৈলটির সংঘর্ষ) প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে এবং উভয়েরই পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে।

    জাহাজের নাবিক ও জেলেরা বলছেন, হিমশৈলগুলো ক্রমাগত সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে এ৭৬ নামের একটি হিমশৈলের কাছাকাছি গিয়ে আতঙ্কিত হয়েছিলেন তাঁরা।

    মার্ক বেলচিয়ারও সমুদ্রে ভ্রমণ করার সময় ওই হিমশৈলটি দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘এর খণ্ডগুলো ওপরের দিকে উঠে ছিল। এগুলো দেখে বড় বড় বরফের টাওয়ার বলে মনে হচ্ছিল। আর আড়াআড়িভাবে তাকালে মনে হচ্ছিল বরফের শহর।’

    সমুদ্রের পানির উষ্ণতা ও বাতাসের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অ্যান্টার্কটিকা আগের চেয়ে আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও হিমশৈল ভেঙে পড়তে পারে।

    যুক্তরাজ্যের মেরু অঞ্চলসংক্রান্ত জাতীয় জরিপ সংস্থা ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের একটি দল ২০২৩ সালে স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো নামের গবেষণা জাহাজে চড়ে এ২৩এ হিমশৈলটির কাছাকাছি গিয়েছিল। বড় হিমশৈল পরিবেশের ওপর কী প্রভাব ফেলে, তা অনুসন্ধান করার বিরল সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য বিজ্ঞানীরা তৎপর ছিলেন।

    পিএইচডি গবেষক লরা টেইলর হিমশৈলটির ৪০০ মিটার দূরের পানির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। হিমশৈলের গলিত পানির কারণে সমুদ্রে কার্বন চক্রের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে গবেষণা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা যে পানি পান করি, এগুলো তেমন নয়। এগুলো পুষ্টিগুণ ও রাসায়নিক উপাদানে ভরা। পাশাপাশি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মতো ক্ষুদ্র প্রাণীরা এর ভেতরে জমাট বেঁধে আছে।’

    হিমশৈল গলে যাওয়ার সময় এর বিভিন্ন উপাদান পানিতে মিশে যায়। এটি সমুদ্রের গভীরে বেশি করে কার্বন সঞ্চয় করতে পারে। আর এতে প্রাকৃতিকভাবেই পৃথিবীর কিছু কার্বন ডাই–অক্সাইড আটকে পড়ে।

    সর্বশেষ

    মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী...

    ঢাকায় শিগগিরই চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়

    ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত, শিগগিরই...

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশি

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশিঈদুল...

    প্রতিবেশীর গুলিতে অভিনেতা খুন

    হলিউড অভিনেতা জোনাথন জসকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।...

    আরও সংবাদ

    মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী...

    ঢাকায় শিগগিরই চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়

    ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত, শিগগিরই...

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশি

    জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাট, ছোট গরুর চাহিদা বেশিঈদুল...