বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়াউর রহমান একটি চিরস্মরণীয় একটি নাম। তিনি শুধুমাত্র একজন সামরিক নেতা ছিলেন না, ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং সর্বোপরি গণমানুষের একজন নেতা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবিস্মরণীয় অবদান, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রচলিত ধারণার বিপরীতে তার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এদেশের তারুণ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তারুণ্যের এক বিশাল অংশ তাঁকে এক বিপ্লবী নেতা হিসেবে গণ্য করে, যিনি দেশকে নতুন দিশা দেখাতে চেয়েছেন, চেয়েছেন এই দেশ যেন একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠে।
আজকে দেখা যায় এদেশের তরুণদের বড় একটা অংশ জিয়াউর রহমানের চিন্তাভাবনা, তার উদার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, দেশকে উন্নত করার গভীর প্রত্যয়, উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ সম্বন্ধে তার দর্শন এবং তার গভীর দেশপ্রেম দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তাঁর কাছে তারুণ্য ছিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। তিনি দেশের তরুণদের সম্পৃক্ত করে দেশকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তারুণ্য মানে শুধুমাত্র বয়স নয়, বরং তা একটি চেতনা, একটি প্রেরণা, যা একজন জাতির মধ্যে পরিবর্তন এবং উন্নতির আকাক্সক্ষা জাগায়। জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তিনি দেশের তরুণ সমাজের দিকে নজর রেখেছিলেন। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তরুণরা ছিল তার অন্যতম শক্তি। তাদের সাহস, উদ্যম ও দেশপ্রেম ছিল সেই কঠিন সময়ে পথের দিশা ও সে সময়ের প্রধান চালিকাশক্তি। তারুণ্যের মধ্যে রয়েছে এক বৈপ্লবিক আদর্শ, যা দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য অতি আবশ্যক।
জিয়াউর রহমান একটি দৃঢ় জাতীয়তাবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে একটি দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং উন্নতির জন্য নিজস্ব পথ অনুসরণ করবে। যুবকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার জন্য তিনি নতুন এক রাজনীতির জন্ম দিয়েছিলেন। তার মতে,তরুণদের মধ্যে একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে তোলা জরুরি ছিল, কারণ তারাই জাতির মূলশক্তি এবং সম্ভাবনার প্রতীক। তিনি মনে করতেন, তরুণদের মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে একটি ছিল দেশের তরুণ সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি দেশের তরুণরা যদি তাদের নিজেদের কর্মদক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায়, তবে তারা দেশেরঅর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে পারবে। তাঁর উদ্যোগে দেশে নানা শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়, জাতীয়করণকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
তিনি যে সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন, সে সময় তরুণদের প্রতি তার মনোভাব ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি জানতেন, দেশের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি তরুণদের মেধা, উদ্যম এবং চেষ্টার ওপর নির্ভর করে। তাই তিনি নানাউন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণদের জন্য শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তার নেতৃত্ব তরুণদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছিল, যারা দেশের ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল।
জিয়াউর রহমান সারা জীবনই প্রথাগত চিন্তার বাইরে চিন্তা করেছেন। অনেক সময় তার চিন্তাভাবনাকে বৈপ্লবিক মনে হতে পারে, কিন্তু সে সময়ে জাতীয় উন্নয়নে সেটাই ছিলো অত্যন্ত বাস্তবাধমী। তারুণ্যের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করার জন্যে তিনি একাধারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য, মানবাধিকার এবং জনগণের স্বাধীনতার পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান থেকে কখনও পিছু হঠেন নাই। তার রাজনৈতিক জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই দেশের মানুষের জন্য ন্যায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি। তরুণ সমাজ তার নেতৃত্বের মাধ্যমেই অনুভব করেছিল যে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব, যা হতে পারে এদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
তরুণদের উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির জন্য জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারুণ্যের ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সময়েই দেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় যুব বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তিনি জনসেবা, জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং দেশের রাজনৈতিক পরিসরে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তরুণদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে তিনি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং সমৃদ্ধির আকাক্সক্ষা জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমান সমাজে সমতা ও ন্যায়ের জন্য কাজ করেছেন। তিনি জানতেন, যে কোনো জাতির উন্নতির জন্য সামাজিক পর্যায়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। তরুণরা যদি এই সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভুমিকা পালন করে, তবে তারা দেশের উন্নয়নে বড় ধরনের ভ‚মিকা রাখতে পারবে। তারুণ্যের মাঝে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যে উদ্যম এবং প্রেরণা থাকা উচিত, তা তিনি দেশের সর্বস্তরের তরুণদের মধ্যে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তরুণদের প্রতি জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সৃজনশীল ও উদার। তিনি চাইতেন তরুণদের মধ্যে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হোক যেন তারা অন্য কারো হাতের ক্রীড়ানকে পরিনত না হয়। তিনি চাইতেন তরুণরা সবকিছুকে প্রশ্ন করে জেনে নেবে।
তিনি মেধাবি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে “হিজবুল বহরে” সফরকালে দেশের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত চাইতেন, চাইতেন বিতর্কের মাধ্যমে তারা যেন সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হয়। তাঁর মতে একটি জাতি শুধুমাত্র তখনই উন্নতি করতে পারে, যখন সেখানে নতুন চিন্তা, নতুন ধারণা এবং নতুন উদ্যোগের বিকাশ ঘটে। তারুণ্যের মধ্যে এভাবেই সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের পক্ষে তিনি সবসময় ছিলেন।
জিয়াউর রহমানের চিন্তাধারা এবং কর্মপরিকল্পনায় দেশের তরুণ সমাজের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, দেশের উন্নয়ন এবং কাক্সিক্ষত ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য তরুণ সমাজকে সামনে এনে তাদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানোসহ তাদের মধ্যে উদ্যম, সৃজনশীলতা এবং দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে হবে। তিনি মনে করতেন তারুণ্যনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি একটি দেশের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। তাঁর সে ধারণা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর এই চিন্তাভাবনা বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে পথের নির্দেশনা দিবে এবং এই সঠিক পথের সন্ধান তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আশা জাগিয়ে রাখবে আরোও বহুদিন।
মোঃ মেহেরাব হোসেন অভি
শিক্ষানাবিশ আইনজীবি, ঢাকা জজ কোর্ট