উচ্চ সুদহারসহ বেশ কয়েকটি কারণে এ হার ৮ শতাংশের বেশি উঠছে না বলে তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা।
গণ অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে নিম্নমুখী প্রবণতায় থাকা বেসরকারি খাতের ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির হার মে মাসেও আগের মাসের চেয়ে কমেছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, মে মাসে এ খাতে ঋণ ছাড়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এ হিসাব বলছে, টানা সাত মাস থেকে বেসরকার খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের দেওয়ার ঋণ বাড়ার হার ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। সবশেষ অক্টোবরে এ খাতে ৮ শতাংশের বেশি (৮ দশমিক ৩০ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
সংকোচনমূলক নীতি বজায় রাখার ধারায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবুও এ হার ৮ শতাংশের বেশি উঠছে না উচ্চ সুদহারসহ বেশ কয়েকটি কারণে বলে তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের মতে উচ্চ সুদ, গ্যাস সংকট, কঠোর নীতির মত কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিচ্ছেন।
“ব্যবসায়ীরা বর্তমানে বেঁচে থাকার সংগ্রামে রয়েছে। ব্যবসা করতে খরচ এত বেড়েছে যে নতুন ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন না।”
ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৫ থেকে ১৭ শতাংশে পৌঁছানোর তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে খরচ বাড়লে তো ব্যবসায়ীরা ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসকে’ বিবেচনায় রেখেই বিনিয়োগ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নানা রকম কঠিন নীতি ব্যবসাকে আরো বেশি কঠিন করেছে বলেও দাবি তার।
তার মধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া, ৫ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার ‘এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন প্রি-ফাইনান্স ফান্ড (ইএফপিএফ) ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পোশাক রপ্তানিকারকরা সমস্যার মধ্যে পড়ছেন বলে এ ব্যবসায়ী নেতা তুলে ধরেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণে না যাওয়ার বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। এ কারণে কারখানা স্থাপনের মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১০ মাসে মূলধনি যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৪১ কোটি ৯১ লাখ ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৯৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। শতকরা হিসাবে কমেছে ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাসে অস্থিরতা শুরুর পর ৫ অগাস্ট সরকার পতন ঘটে। ওই মাস থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে।
আন্দোলন শুরুর মাস জুলাইয়ে এ খাতে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পরের মাস অগাস্টে তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। সেই থেকে শুরু নিম্নমুখী প্রবণতায় সেপ্টেম্বরে তা কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
নিম্নমুখী এ হার পরের মাস অক্টোবরে কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে। পরের মাস নভেম্বরে তা নেমে যায় ৮ শতাংশের নিচে– ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে এবং ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির তথ্য আছে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে। সেই তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।