গত বছরের জুলাইয়ে আসে ১৯১ কোটি ডলার। ওই মাসে অবশ্য সরকারবিরোধী আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে; প্রবাসীদের অর্থ না পাঠানোর আহ্বানও আসে নানা মহল থেকে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৪৭ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্সের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে বছরের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১৯১ কোটি ডলার।
ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে অবশ্য জুলাই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। প্রবাসীদের দেশে অর্থ না পাঠানোর আহ্বানও আসে নানা মহল থেকে। সব মিলিয়ে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়।
সরকারের পতন ঘটলে পরের মাস থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। অগাস্টে আসে ২২২ কোটি ডলার। এরপর থেকে টানা ১২ মাস ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স এল।
প্রবাসী আয় বাড়ার কারণ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছেন, “হুন্ডি ব্যবসা আগের চেয়ে কমেছে, তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বেড়েছে।
“সরকার পরিবর্তনের পর থেকে মাসে ২০০ কোটির বেশি রেমিটেন্স আসছে। তাতে বোঝা যায়, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই জেলে রয়েছেন; কেউ কেউ পলাতক।”
তিনি বলেন, “এমন তো নয় যে প্রবাসীদের আয় আগের চেয়ে বেড়েছে কিংবা অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কর্মসংস্থানও বাড়েনি। অর্থাৎ, রেমিটেন্স বাড়ার প্রধান কারণ হুন্ডি পথে রেমিটেন্সের আদান-প্রদান কমে যাওয়া।”
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রপ্তানি ও রেমিটেন্স আয় বাড়ার কারণে ডলার সরবরাহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এজন্য ডলার দর কমছিল। তবে দাম যেন বেশি না কমে, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, “আবারও সময়মতো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কেনা হবে। ৫০ কোটি ডলারের মতো ইতোমধ্যে কেনা হয়েছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে ৬০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। এ কারণে বাজারে তারল্যও বাড়ছে।”
চলতি বছরেই ডলারের দর বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে ১৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, “ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে দেওয়ার সময় হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। বাজারভিত্তিক করা হলেও বর্তমানে ডলারের যা দর রয়েছে, তার থেকে খুব বেশি তারতম্য ঘটবে না।”
সে সময় তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক মাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ডলার বাজার স্থিতিশীল ছিল। আগামীতেও আশা করছি ডলার বাজারে হস্তক্ষেপ করার দরকার হবে না।”
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, “ডলার দর মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তাতে এ বাজারের ওপর মানুষের এক ধরনের আস্থা বাড়ছে। এ কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়ছে।”
সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তিন হাজার ৩২ কোটি ডলার। এর আগে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে।
এক বছর আগের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে; ৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ কোটি ৬৭ লাখ ডলার আসে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে ব্র্যাক ব্যাংকে; ১৭ কোটি ৮১ লাখ ডলার।