চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে মোট এক হাজার ৬৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়, যা গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ২ হাজার ৯২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার গত বছরের রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্য দিয়ে যাওয়া জুলাইয়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
গত জুলাইয়ে এডিপির অর্থ ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই মাসে ছিল ১ দশমিক ০৫ শতাংশ।
সোমবার এডিপি বাস্তবায়নের সবশেষ তথ্য প্রকাশ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ— আইএমইডি।
এবার ‘কাটছাঁটের’ বাজেট দেওয়ার পরও এত কম বাস্তবায়নকে ‘ভালো লক্ষণ’ হিসেবে দেখছেন না পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এসে তিনি বলেন, “আমি দেখলাম, প্রকল্পের বাস্তবায়ন এই এক মাসের, মানে জুলাইয়ের বাস্তবায়ন হাতে এসেছে, দেখলাম- এটা তো এক শতাংশেরও কম। এটা গত বছরের থেকেও কম। এটা ভালো লক্ষণ না।
“গতবছর তো অনেক কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি ছিল। এ বছর তো আরও গতিশীল হওয়ার কথা। আগের বছরের অজুহাত এবছর দেওয়া চলবে না।”
তিনি বিগত সরকারের সময়ের প্রকল্প পরিচালকদের বদলি ও ঠিকাদারদের পলায়নকে এর পেছনে একটা কারণ হিসেবে দেখছেন। কারণ অনেক জায়গায় নতুন ঠিকাদার ‘নিযুক্ত হয়নি’ বলে তুলে ধরেন তিনি।
তবে চলতি অর্থবছর সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, “ইচ্ছা করেই ‘বাস্তবসম্মত’ রাখা হয়েছে আকারের দিক থেকে। কাজেই এটা পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে- এটা আমাদের লক্ষ্য।
“কাজেই আমরা সব মন্ত্রণালয়কে এখন তাগিদ দেব যে, এখন তো আর কোনো অজুহাত দেওয়া চলবে না। এখন প্রকল্পগুলো স্বাভাবিক গতিতে যেন চলে।”
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ায় ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতেই সংশোধিত এডিপি ঘোষণার পরিকল্পনার কথাও তিনি তুলেন।
জুলাইয়ে মোট ১ হাজার ৬৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা গত জুলাইয়ে ছিল ২ হাজার ৯২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
সাধারণত অর্থবছরের প্রথম দিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থছাড় কম হয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে।
গত জুলাইয়ে আন্দোলনের জন্য বাস্তবায়নের গতি অন্যান্যবারের তুলনায় কম ছিল। তখন আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি, কারফিউ জারি, কমপ্লিট শাটডাউনের মত ঘটনায় কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়।
পরে অগাস্টে সরকার পতন হলে আওয়ামী লীগ ঘরানার ঠিকাদাররা অনেকে পালিয়ে গেলে এবং নতুন সরকার এসে প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলে অর্থবছরের পুরো সময়টা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা যায়।
অর্থ কাটছাঁট ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে দাবি করে অনেক প্রকল্প বন্ধও রাখে সরকার। তার প্রভাব পড়ে এডিপিতে; দুই দশকের মধ্যে তলানিতে নামে বাস্তবায়ন হার।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। এ হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ পয়েন্ট কম।
আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া আছে। বিদায়ী অর্থবছরের মত এত কম বাস্তবায়ন হার আর কোনো বছরে হয়নি।