Tuesday, August 12, 2025
More
    Homeআন্তর্জাতিকগাজা সম্পূর্ণ দখলে ইসরাইলের যত চ্যালেঞ্জ

    গাজা সম্পূর্ণ দখলে ইসরাইলের যত চ্যালেঞ্জ

    ফিলিস্তিনি উপত্যকার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলি মন্ত্রিসভাও নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে।  তবে এই ‘অপরাধমূলক পরিকল্পনা’ বাস্তবায়িত হলে এর ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

    কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার মতে, ইসরাইলি সরকারে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা শুক্রবার গাজা  উপত্যকাটি সম্পূর্ণরূপে দখল করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। গাজা শহর দখল এবং এর বাসিন্দাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়াটি শুরু হবে।

    ইসরাইলের এ পরিকল্পনা সম্পর্কে  আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষকরা অসংখ্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করছেন। ব্রিটিশ এবং আমেরিকান মিডিয়া গাজা দখলের পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ এবং এর মানবিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিণতির পাশাপাশি এর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করেছে।

    ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য আই পেপার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালযে উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছে, এই পরিকল্পনায় ‘গাজা যুদ্ধের অবসান, যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং একটি বেসামরিক সরকারের কাছে গাজা উপত্যকা হস্তান্তরের নীতি’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

    গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ

    আই পেপারে উল্লেখ করা হয়েছে, তেল আবিবের পরিকল্পনা গাজা শহর দখল এবং দক্ষিণে, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চল আল-মাওয়াসির বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের মাধ্যমে শুরু হবে।

    ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ টিভির এক প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্থায়ী বেসামরিক অবকাঠামোর মাধ্যমে এই পরিকল্পনায় লজিস্টিক এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করবে। এদিকে, পর্যবেক্ষকরা অনুমান করেছেন যে গাজা শহর এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে প্রায় ৫ মাস সময় লাগবে।

    ব্রিটিশ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এই পরিকল্পনা হামাসকে নির্মূল করা এবং ইহুদিবাদীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

    তবে বিশেষজ্ঞ এবং পর্যবেক্ষকরা বলছেন,এই পদক্ষেপটি বাস্তুচ্যুতির একটি নতুন ঢেউয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।  সমগ্র গাজায় ছড়িয়ে পড়া দুর্ভিক্ষ সংকটকে তীব্রতর করতে পারে এবং গাজায় জিম্মি ইসরাইলিদের জীবনকে বিপন্ন করতে পারে।

    গাজা দখল পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য ইসারাইলি মন্ত্রিসভার বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয় ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে,  গাজা শহরের বাসিন্দাদের বিকল্প এলাকায় স্থানান্তর করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে।

    কিংস কলেজ লন্ডনের সামরিক বিশেষজ্ঞ অ্যারন বার্গম্যান বলেন, ‘গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হওয়ায়, উপত্যকাটি দখলের পরিকল্পনা আরও বাস্তুচ্যুতির দিকে নিয়ে যাবে।  গাজার উপর  সম্পূর্ণ অবরোধের ফলে উপত্যকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া আগের তুলনায় অনেক জটিল হয়ে পড়বে এবং সমগ্র গাজা কার্যত একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। ‘

    গাজা দখলে যেসব বাধা ও চ্যালেঞ্জ

    বিশেষজ্ঞ অ্যারন বার্গম্যানের মতে, ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী সরঞ্জাম ও জনবলের দিক থেকে সম্পূর্ণরূপে দুর্বল এবং গাজা বাকি ২৫ শতাংশ দখল করতে তাদের রিজার্ভ সৈন্য সংগ্রহ করতে হবে।  গাজা উপত্যকায় বর্তমানে চারটি সামরিক বিভাগ রয়েছে; যেখানে গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণরূপে দখল করার জন্য কমপক্ষে ছয়টি বিভাগের প্রয়োজন।

    কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রভাষক রব গেইস্ট পিনফোল্ড গাজা থেকে ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদের ইসরাইলের পরিকল্পনার ব্যাখ্যা করেছেন।

    আই পেপার আরও জানিয়েছে,  রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা সতর্ক করে দিয়েছেন যে গাজা দখল হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরাইলি বন্দিদেও জীবনকেও বিপন্ন করবে।  ইসরাইলি বাহিনীর হাতেই তাদের মৃত্যু হতে পারে। যার ফলে এই পরিকল্পনা সেনাবাহিনীর ভেতরেও বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে।

    ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির জোর দিয়ে বলেছেন,  বাহিনী ক্লান্ত এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও সৈন্য নেই। বিশেষ করে গাজা দখলের পরিকল্পনার জন্য রিজার্ভ বাহিনীকেএকত্রিত করার প্রয়োজন হবে।

    ব্রিটিশ সংবাদপত্রের মতে, বিশ্লেষকদের মতে,  নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার কট্টরপন্থী মন্ত্রীরা, বিশেষ করে স্মোট্রিচ এবং বেন-গভির—গাজার অস্থায়ী দখলকে স্থায়ী দখলে পরিণত করার এবং নতুন বসতি স্থাপনের জন্য ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন।

    রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (আরইউএসইউ)- এর সহ গবেষক বুরকু ওজসেলিক যুক্তি দিয়েছেন,  গাজার সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনা যুদ্ধের একটি অন্ধকার পর্যায় হবে যার সুদূরপ্রসারী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিণতি হবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে তেল আবিবকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাগ্রস্ত দেশগুলোকে হাল ছেড়ে দিতে প্ররোচিত করতে পারে।

    এছাড়া লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের ফেলো ইয়োসি মেকেলবার্গ, যা রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স নামেও পরিচিত যুক্তি,  দিয়েছে, নেতানিয়াহু সরকারের গাজা দখলের পরিকল্পনা চলমান যুদ্ধে তেল আবিবের লক্ষ্যগুলোর তীব্র সংস্করণের সূচনা হতে পারে।

    সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

    সর্বশেষ

    নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ জরিপের উদ্দেশ্য কী

    ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানামুখী তৎপরতা। আগামী...

    পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগাম ভোট দেবেন প্রবাসীরা

    দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রবাসীরা দীর্ঘদিন...

    চীন, ভারত থেকে তৈরি পোশাকের আরও ক্রেতা আসছে বাংলাদেশে

    বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য প্রথমে যে বিষয়টি বড় ধাক্কা...

    গুলি করা ছাড়া উপায় নেই, হাসিনার ফোনালাপ ফাঁস

    চব্বিশের গণহত্যায় হাসিনার বিচার যখন চলছে, তখন একে একে...

    আরও সংবাদ

    নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ জরিপের উদ্দেশ্য কী

    ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানামুখী তৎপরতা। আগামী...

    পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগাম ভোট দেবেন প্রবাসীরা

    দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রবাসীরা দীর্ঘদিন...

    চীন, ভারত থেকে তৈরি পোশাকের আরও ক্রেতা আসছে বাংলাদেশে

    বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য প্রথমে যে বিষয়টি বড় ধাক্কা...