নিম্ন আয়ের মানুষদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরের চেষ্টায় অর্থপ্রবাহ বাড়াতে ‘ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম’চালু করেছে পিকেএসএফ।
ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাত বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ‘অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি’ হতে পারে মন্তব্য করে এ খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেছেন, “বর্তমানে দেশের মোট কর্মসংস্থানের অর্ধেকের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে, কিন্তু জাতীয় আয়ে এ খাতের অবদান মাত্র এক চতুর্থাংশের মত। এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হলে, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে।”
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে সংস্থাটির ‘ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন গভর্নর।
‘পিকেএসএফ’ এর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ এখন মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকার মত, যা দশগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন আহসান মনসুর।
আর্থিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি, মানুষের অর্থের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক খাতে অনিয়ম কমাতে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গঠনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পিকেএসএফ এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাত বিষয়ক দুটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিয়ার রহমান এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. রওশন হাবীব।
ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম সম্পর্কে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, “দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের উদ্যোক্তায় রূপান্তরের যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিকেএসএফ, তাতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত করা উদ্দেশ্যে এ স্কিম চালু করা হচ্ছে।
“এর আওতায় ব্যংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থাগুলো মাঠ পর্যায়ে উপযুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করবে। ব্যাংক পর্যায়ে এ ঋণের যা ঝুঁকি থাকবে, তার পুরোটার গ্যারান্টি দেবে পিকেএসএফ।”
তিনি বলেন, পিকেএসএফ সারা দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি ডেটাবেইজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা এসব উদ্যোগে অর্থের প্রবাহকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে পিকেএসএফ এর ঋণ আদায়ের হার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং তাদের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ হয় না জানিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এডিবি পিকেএসএফ-এর সাতটি প্রকল্পে ৩৭ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। এর মধ্যে, ২০২৩ সালে পিকেএসএফ-এর এমএফসিই প্রকল্পে ২০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা হয়। এ প্রকল্পেরই একটি অংশ হিসেবে ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম চালু করা হল।
তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী যে, ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম সফল হবে এবং এটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতে আরও আর্থিক উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করবে।”
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ-এর সাথে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, প্রাইম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল রহমান, সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আবিদুর রহমান চৌধুরী এবং দ্যা ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (ইউবিকো) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এম এম মোস্তফা বিলাল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।