“যুদ্ধটা যদি বেশি দিন চলে, তাহলে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বে,” বলেন উপদেষ্টা।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে, তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কেনাকাটায় তেমন কোনো প্রভাব দেখছেন না অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “আজ কিছু সার ও এলএনজি আনার প্রস্তাব পাস হয়েছে। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে তেলের দাম ইমিডিয়েটলি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আমরা এখন যেগুলো অর্ডার করেছি, সেখানে প্রভাব পড়েনি।
“যুদ্ধের কারণে যদি এলএনজি প্রাইস বেড়ে যায়, সেটা আমরা দেখব। কিন্তু আজকে যে এলএনজি কেনা হয়েছে, ভাগ্য ভালো এগুলো তারা আগে যেভাবে কোট করেছিল, সেই দামেই দিয়েছে।”
শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা লক্ষ্য করে আচমকা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই তেহরান ও তেলআবিবের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা চলছে।
এই যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে শুরু হয় দরপতন।
ইরানের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা হলে কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাবে পুরো বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ ইরান থকে সরাসরি জ্বালানি কেনে না। তবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেছে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা এড়ানোর সুযোগ বাংলাদেশের থাকবে না।
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ তেল পরিবহন হয়, তা বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ। ফলে ওই পথ বন্ধ হয়ে গেছে তেলের দাম অনেক বেড়ে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ও ওমান থেকে বাংলাদেশ এলএনজি কেনে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে সরবরাহ পেতে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। তখন বিদুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ধাক্কা লাগবে রপ্তানিমুখী শিল্পখাতে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাবে পণ্য পরিবহন খরচ এবং মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। পরিস্থিতি সেরকম হলে বাংলাদেশকেও ভুগতে হবে।
হরমুজ প্রণালী দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির কাজও ব্যহত হবে। সময়মত পণ্য পৌঁছাতে না পারলে তা হবে বড় ক্ষতির কারণ।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ বিকল্প কী চিন্তা করছে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অবজার্ভ করছি। যুদ্ধটা যদি বেশি দিন চলে, তাহলে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বে। আমরা বিশ্ব বাজার থেকে এলএনজি আমদানি করি অনেক বেশি। কিন্তু এই যুদ্ধ শুধু গ্যাসের দাম নয়, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক জাহাজ যে হরমুজ প্রণালী দিয়ে আসে সেটাও আক্রান্ত হতে পারে। আমার মনে হয় যুদ্ধটা বেশি দিন চলবে না।”
এদিন ক্রয় কমিটির বৈঠকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির কাছ থেকে ৬১২ কোটি ৫৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৬০ টাকা দরে এক কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। আগামী ১৫-১৬ জুলাইয়ের মধ্যে এই কার্গো বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
এছাড়া চট্টগ্রামের বহুজাতিক কোম্পানি কাফকোর কাছ থেকে প্রতিটন ৩৮৩ দশমিক ২৫ ডলার দরে ৩০ হাজার টন ইউরিয়ার সার কেনার প্রস্তাবও ক্রয় কমিটির অনুমোদন পেয়েছে।