আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তথ্যানুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এরপর এবার বরখাস্তের এ আদেশ এল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে চলা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় এর কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে সরকারের ‘নির্দেশনা অমান্য করে’ কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ”জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন ২১ ও ২৮ জুন তারিখে কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। অথচ এর আগে ১৮ জুন এনবিআর এক আদেশে ২৮ জুনের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
”তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ শনিবার ও রোববার বন্ধ রেখে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি করায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এ প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা) বিধিমালা, ২০১৮ এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এই ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের এক সপ্তাহের টানা আন্দোলনের মধ্যে শনিবার থেকে দেশের কাস্টম ও ভ্যাটের দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আসে।
এ কর্মসূচি চলতে থাকলে দ্বিতীয় দিন রোববার নড়েচড়ে বসে সরকার। এনবিআরের সেবা ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে আন্দোলনরতদের কাজে যোগ দিতে কঠোর হুঁশিয়ারি আসে।
এরমধ্যেই আন্দোলনরত ছয় এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় দুদক।
আগের সূচি অনুযায়ী সেদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তাতে বসতে চাননি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কমপ্লিট শাটডাউন চালু রাখা অবস্থায় তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা জানান।
এরমধ্যে সংকটের সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।
দিনভর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পরে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র। ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।
ওই দিন রাত থেকেই কাস্টম হাউজ খুলে দেওয়া হয়; সোমবার থেকে কাজেও ফেরেন সকলে। তবে বদলি, মামলা ও বরখাস্তের আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মধ্যে।
মঙ্গলবার আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তথ্যানুসন্ধানে নামে দুদক। এরপর এদিন মধ্যরাতে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন এল।