ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী
বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে অশান্তি বিরাজ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের এ পৃথিবী থেকে শান্তি বিদায় নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী হানাহানি, মারামারি, যুদ্ধবিগ্রহ বেড়েই চলেছে। অথচ মানবজাতি প্রকৃতিগতভাবেই শান্তশিষ্ট ও শান্তিপ্রিয়। কোনো ব্যক্তিকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনি যুদ্ধবিগ্রহ চান, নাকি শান্তি চান? উত্তর এসেছে শান্তির পক্ষে। সর্বযুগে মানুষ হানাহানি এবং অশান্ত পরিবেশকে ঘৃণা করে এসেছে। প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ চাইবে পৃথিবী হোক শান্তির অনন্য উদাহরণ। কেউই অশান্ত পরিবেশে বাস করতে চায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবী ক্রমেই অশান্ত এবং যুদ্ধবিগ্রহের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবী জ্ঞান-বিজ্ঞানে চরম উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। মানুষ তার বুদ্ধি ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর উন্নয়ন করে চলেছে। আজ থেকে পঞ্চাশ বা একশ বছর আগে পৃথিবীতে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হতো, বর্র্তমানে তার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। পৃথিবীতে সম্পদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু সেই সম্পদ আহরণ এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবার মাঝে বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।
একটা সময় ছিল যখন পৃথিবীর একটি বিরাট অংশজুড়ে শান্তি বিরাজ করছিল। মানুষের আচরণ ছিল সহনীয় এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের ন্যায়সংগত অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারত। শুধু মানুষ নয়, বনের পশুও বেঁচে থাকার অধিকার ভোগ করত। কিন্তু মানুষ পশুপাখির আবাসস্থল ধ্বংস করে তাদের জীবন বিপন্ন করেছে। মানুষ তো বটেই, বনের পশুও পৃথিবীতে তার বসবাসের অধিকারটুকু হারাতে বসেছে। স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভের কারণে পৃথিবী ক্রমেই অশান্ত এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ যেদিকে তাকাই, সর্বত্রই অশান্ত পরিবেশ প্রত্যক্ষ করি। দাঙ্গা-হানাহানি, যুদ্ধবিগ্রহ এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকদিন ধরেই ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বর বাহিনী নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর আক্রমণ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনবাসী বিনা প্রতিরোধে ইসরাইলি বর্বর বাহিনীর হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ নারী-পুরুষ, এমনকি বৃদ্ধকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ইসরাইলি সরকার নিরীহ-নিরস্ত্র ফিলিস্তিনবাসীর ওপর প্রথাগত যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। ইসরাইলের আগ্রাসনে পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়েই ইসরাইলি বাহিনী এমন নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাতে পারছে। ইসরাইলের এ নির্মমতার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হলেও এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এমনকি আরব বিশ্বের কোনো কোনো মুসলিম রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে ইসরাইলকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। যারা কথায় কথায় মানবাধিকারের প্রসঙ্গে মুখে ফেনা তুলে, সেসব রাষ্ট্রও ইসরাইল প্রশ্নে একেবারে নীরব। তাদের এ নীরবতা এবং ইসরাইলি সৈন্যদের বর্বরতায় বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ হতবাক। কিন্তু তারা ইসরাইলি বর্বরতার কোনো প্রতিকার করতে পারছে না।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার দোসররা চায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সবসময় যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করুক, যদিও মুখে এরা শান্তির কথা বলে। এর কারণ হলো, এদের অর্থনীতি যুদ্ধাস্ত্রনির্ভর। এমন দেশও আছে, যাদের জাতীয় আয়ের ৬০ শতাংশই অর্জিত হয় সমরাস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে। এরা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সরাসরি যুদ্ধে যুক্ত হয় না। কিন্তু সুযোগ পেলেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রক্সিযুদ্ধে লিপ্ত হয়। আমেরিকার সামরিক সহায়তা ও সমর্থন না পেলে ইসরাইলের পক্ষে ফিলিস্তিনে এভাবে আক্রমণ চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা সম্ভব হতো না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ আমরা জানি না। এ যুদ্ধে কার লাভ, কার ক্ষতি, সেটাও আমাদের জানা নেই। কিন্তু এ যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা কোনোভাবেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সম্পৃক্ত নয়, তারাও এ যুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এর পালটা ব্যবস্থা হিসাবে রাশিয়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ অথবা কমিয়ে দেয়। এতে পৃথিবীজুড়ে সাপ্লাই সাইড বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এ সুযোগে ইউক্রেনের কাছে অস্ত্র বিক্রি বাড়িয়ে দেয়। এ অসম যুদ্ধ রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রভূত ক্ষতি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি পায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি অনিবার্য ছিল? অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র বিক্রির সুবিধার্থে এ যুদ্ধে ইন্ধন জুগিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ বা সংঘাত অব্যাহত আছে। মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত চলছে অনেকদিন ধরে। সংঘাতের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের অস্ত্র বিক্রির সুযোগ লাভ করেছে। সাম্রাজ্যবাদী, যুদ্ধবাজ দেশগুলো মুখে যা কিছুই বলুক না কেন, তারা কখনোই চায় না বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক এবং সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক। তাহলে তাদের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই তারা নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, এমনকি প্রথাগত যুদ্ধ লাগিয়ে রাখে। যুদ্ধবাজ দেশগুলোর এ নির্মমতা মানবজাতিকে নিঃসন্দেহে ব্যথিত করলেও এর সমাধানে তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এসব নির্মমতা দেখে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ ক্লান্ত, বিষণ্ন ও হতাশ হয়। তারা প্রতিবাদ করলেও সেই প্রতিবাদের ভাষা যুদ্ধবাজদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না।
লিবিয়ায় যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। গণ-আন্দোলনের মুখে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল বাসার দেশত্যাগ করেছেন। তারপর থেকে দেশটিতে যে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানের কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছে না। কাতার ইসরাইলি বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। কিছুদিন আগে তারা ইরানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল। সেই যুদ্ধের পেছনেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, কোথাও যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা বছরের পর বছর চলতে থাকে, ধ্বংস হয় মানুষ ও সম্পদ।
নেপালে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি সরকারের পতন হলে দেশটিতে চরম অরাজকতা তৈরি হয়েছে। এ অশান্ত পরিবেশ দেশটিকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যায়, তা নিয়ে অভিজ্ঞ মহল শঙ্কিত। অনেকেই মনে করেন, নেপালের ছাত্ররা গত বছর জুলাই আন্দোলনে বাংলাদেশি ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করে উদ্দীপ্ত হয়েই আন্দোলনে নামে এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। ক্ষমতার প্রতি জনসমর্থনহীন একশ্রেণির শাসকের দুর্দণ্ড মোহ রাজনৈতিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তোলে। ম্যাকিয়াভেলি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য প্রিন্স’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘একজন শাসককে হতে হবে সিংহের মতো শক্তিশালী এবং শৃগালের মতো ধূর্ত।’ তাকে ক্ষমতায় আরোহণ এবং যে কোনো মূল্যেই হোক ক্ষতায় টিকে থাকতে হবে। নীতি-নৈতিকতা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। বর্তমানে বিশ্বের বহু রাষ্ট্রেই শাসকদের মধ্যে ম্যাকিয়াভেলির থিউরি অনুসরণের প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের পদত্যাগী এবং দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি গণতন্ত্রের সর্বনাশ করেছেন। তিনি আজীবন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনের স্বপ্ন দেখতেন। বাংলাদেশ ও নেপালের গণ-আন্দোলনের মধ্যে কিছুটা মিল পাওয়া গেলেও নেপালের সরকারি বাহিনী বাংলাদেশের মতো এত নির্মম গণহত্যা চালায়নি। নেপালে চলমান কয়েক দিনের আন্দোলনে ২২ জন লোকের প্রাণহানি হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করেন। আর বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় অন্তত দেড় হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়। অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন। ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন লোভ শেখ হাসিনাকে বিশ্বের অন্যতম নিষ্ঠুর শাসকে পরিণত করে। স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হলেও আমাদের দেশে এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এটা দূরীভূত করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি।
যেভাবে যুদ্ধ-সংঘাত বাড়ছে, তাতে মনে হয়, বিশ্ব অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অনেক স্থানেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চলছে। অনেক স্থানে আন্দোলনকারীরা সফল হচ্ছেন। কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও সর্বক্ষেত্রে শান্তি ফিরে আসেনি। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও তাদের রেখে যাওয়া উত্তরসূরিরা দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অশান্তি তৈরি করছে। অর্থাৎ রক্তদানের বিনিময়েও শান্তির নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। গণপ্রত্যাশার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং ক্ষমতার প্রতি দুরন্ত আকর্ষণ একজন শাসককে স্বৈরাচারী করে তোলে। সাধারণ মানুষ শান্তি চায়। প্রতিটি ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীতে এমন একটি ধর্মও নেই, যেখানে অকারণে যুদ্ধবিগ্রহের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। পৃথিবীতে সবাই তাদের অধিকার এবং যোগ্য মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। যতই দিন যাচ্ছে, শান্তি ততই অধরা হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কী অবদান রাখছেন, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমি নোবেলবিজয়ী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আবেদন করতে চাই, আপনারা বিশ্বশান্তির জন্য উচ্চকণ্ঠ হন। যুদ্ধ-সংঘাতের বিরুদ্ধে এবং শান্তির পক্ষে আপনাদের কণ্ঠ উচ্চকিত করুন। বিশ্বব্যাপী যারা শান্তিপ্রিয় মানুষ আছেন, তারাও আপনাদের পাশাপাশি শান্তির পক্ষে অবস্থান নিতে পারে।
বিশ্বের বহু দার্শনিক-সমাজবিজ্ঞানী শান্তির পক্ষে কথা বলেছেন। পৃথিবীতে যতদিন হিংসা, দ্বেষ, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, দেশে দেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধবিগ্রহ বিরাজ করবে, ততদিন এ শান্তি অধরাই থেকে যাবে। যুগে যুগে বহু মনীষী, দার্শনিক, ধর্ম প্রচারক, রাজনীতিবিদ অহিংসার বাণী প্রচার করেছেন এবং বিশ্বশান্তির পক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন, এর বহু উদাহরণ মানব ইতিহাসে পাওয়া যাবে। আমাদের মহানবী (সা.) শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার করেছেন। গৌতম বুদ্ধের মতে, অহিংসাই পরম ধর্ম; মহাত্মা গান্ধীও অহিংসার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এসবের ইতিবাচক প্রভাব মানবজাতিকে প্রভাবিত করেছিল।
এ প্রসঙ্গে ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইমি ডুর্খিমের (Emile Durkheim) তত্ত্বের উল্লেখ করে এ নিবন্ধের ইতি টানতে চাই। তিনি বলেছেন, পৃথিবীতে এত যুদ্ধবিগ্রহ ও অশান্তির মূল কারণ হলো মানুষের অনন্ত আকাঙ্ক্ষা (Unlimited desire of mankind)। অর্থাৎ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। এ অন্তহীন চাওয়াপাওয়া এক অশান্ত ও অস্থির পৃথিবীর জন্ম দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো মানুষের এই অনন্ত আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা আশা করব, মানুষ তার অনন্ত আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ এবং একে অন্যের ন্যায়সংগত চাহিদা পূরণে তৎপর থাকবে।
ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত